×

জাতীয়

২ বছরেই অস্তিত্বহীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৪৫ পিএম

২ বছরেই অস্তিত্বহীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময়

বিশাল কর্মযজ্ঞ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাকডাক। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতাদের সম্মিলন। ধারাবাহিক বৈঠক। কর্মসূচি প্রণয়ন। সরকারকে চ্যালেঞ্জ। আরো অনেক হুঙ্কার। আর বছর পেরোতেই চুপচাপ। দুই বছরে অনেকটা অস্তিত্বহীন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কারো প্রতি কারো নির্ভরতাও নেই। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে। জোটের এখন ধারাবাহিক বৈঠক নেই। নেই সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি। নেতাদের মধ্যেও পারস্পরিক যোগাযোগ নেই। জোটের প্রধান দল বিএনপির অনাগ্রহের কারণেই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ভোটের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৭টি দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং নাগরিক ঐক্য- এ চার দল মিলে সরকারবিরোধী জোটের যাত্রা শুরু হয়। এর কিছুদিন পর সম্পৃক্ত হয় কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মতভিন্নতা দেখা যায়। শপথ প্রসঙ্গে জোটের দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হতে থাকে। কয়েকটি দল জোট ছেড়ে যায়। বাকিরা যে যার মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। নির্বাচনের পর গত বছরের মে মাসে ড. কামাল হোসেন কয়েকটি কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই সময়ে বিএনপির শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে জোটের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে জোটগত কর্মসূচি হয়নি। এরপর থেকে জোটের আর কোনো কার্যক্রমই নেই।

সূত্র জানায়, বিএনপির কাছে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো গুরুত্ব নেই। দলীয় ফোরামে এই জোট নিয়ে কোনো আলোচনাও নেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঐক্যফ্রন্টের আলোচনা এড়িয়ে চলছেন। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট কোনোটিই ভাঙেনি। তার মতে, ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর শুধু রাজনৈতিক দল নয়, জনগণ পর্যন্ত স্তম্ভিত হয়ে গেছে। তাই সবকিছু গুছিয়ে উঠতে সময় লাগছে। সময়মতো জোটকে গতিশীল করা হবে।

এদিকে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিলেও ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। নানা অজুহাতে তারা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ এড়িয়ে যান। তাদের যুক্তি- ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামালসহ অন্যরা বক্তব্যে বারবার বঙ্গবন্ধুর নাম নিলেও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বা জিয়ার নাম নেন না। এতে তারা অস্বস্তিতে পড়েন।

নির্বাচনী এই জোটের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, যারা এক সময়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিল তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় কেটে পড়তে চাইছে। আর এই রকম দুজন নেতার মন রক্ষায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এড়িয়ে চলছেন। এই মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্টকে এড়িয়ে চলা মানে দলকে নতুন করে সংকটের মুখে ফেলা বলে মনে করছেন তারা।

তারা মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তথা উদারপন্থি বলে পরিচিত ওই দলগুলো বিএনপির কাছ থেকে চলে গেলে দুদিক থেকেই সরকারের লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। একদিকে ওই দলগুলো বিএনপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। অন্যদিকে জামায়াতকে জড়িয়ে বিএনপিকে ফের ‘জঙ্গিবাদী’ হিসেবে তুলে ধরবে সরকার। এজন্য জোট সক্রিয় করতে হবে।

অন্যপক্ষ বলছে, এই জোট সর্বশেষ নির্বাচনে এবং পরের এক বছরে দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বের ব্যাপারে কিছু ক্ষেত্রে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং অনেক প্রশ্নও রয়েছে তাদের। তারা মনে করেন, ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেননি। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে এসেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। এটা বোঝার পরে তার সঙ্গে থাকা মানে আত্মাহুতি দেয়া।

এছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ড. কামাল হোসেনকে মানতে চান না। খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তারা নতুন করে শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। তারা মনে করেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপির লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এমনকি কথা থাকলেও জোটগতভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে না পারায়ও ঐক্যফন্ট্রের প্রতি বিএনপির ক্ষোভ রয়েছে।

জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যর্থতার দায় জোটের সবারই নেয়া উচিত। এককভাবে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। সব মিলিয়ে জোটের কর্মকাণ্ডে একটা বিভ্রান্তি ছিল।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পর আমরা যে আন্দোলন রাজপথে গড়তে চেয়েছিলাম, একটি দলের জন্য বাস্তবে তা পারিনি। আমাদের হয়তো আস্থা না থাকার কারণে জোট এখন নিষ্ক্রিয়। তবে এখন কারো কারো আচার-আচরণে মনে হচ্ছে ফ্রন্ট ছাড়তে চাইছে। তবে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।

জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট্রের মৃত্যু হয়নি। প্রাণহীন অবস্থায় টিকে আছে। ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কিনা- এ সিদ্ধান্ত বিএনপিকেই নিতে হবে। তবে বিএনপিরই ফ্রন্টকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। এ জোটের এখনো প্রয়োজনীয়তা আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App