×

জাতীয়

বিমান চলাচলে টানাপড়েন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২৮ এএম

বিমান চলাচলে টানাপড়েন

বাংলাদেশ-সৌদি আরব

বিপাকে সৌদি প্রবাসী শ্রমিকরা টিকেটের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ

রিটার্ন টিকেট না পেয়ে ক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসী শ্রমিকরা গতকাল মঙ্গলবার রাজপথে নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। তারা সৌদি এয়ারলাইন্স, বিমান অফিস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশটিতে ফিরতে না পারলে চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে এসব প্রবাসী শ্রমিকের। দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল নিয়ে টানাপড়েন দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তারা।

এদিকে বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সন্ধ্যায় তিনি ভোরের কাগজকে জানান, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিমান চলাচলের অনুমতি রয়েছে ঠিকই; কিন্তু বিমান অবতরণের অনুমতি এখনো পাওয়া যায়নি। আমাদের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতে সৌদি এয়ারলাইন্স যত ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, ততগুলোই দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে তিনি এ কথা জানান।

গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি আরবের ৩টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই বিমানের ফ্লাইটের অনুমতি বাতিল করে সৌদি আরবের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আজ বুধবার থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিয়েছিল সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। গত রবিবার বেবিচকও সৌদি এয়ারলাইন্সের সে অনুমতি বাতিল করে। তবে তা আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়। এ ঘটনার পর গতকাল টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দেয় সৌদি এয়ার। দুই দেশের বিমান চলাচল নিয়ে এ টানাপড়েনে বিপাকে পড়েন প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। গত কয়েক দিন ধরে সৌদি প্রবাসী শ্রমিকরা রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারের অফিসে ফিরতি টিকেটের জন্য ভিড় করছিলেন।

গতকাল সকালে টিকেটের জন্য প্রবাসী শ্রমিকরা আবারো আসেন। কিন্তু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কিছুক্ষণ পরই কাউন্টার বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন হাজার হাজার শ্রমিক। এনামুল হক নামে এক শ্রমিক জানান, তিনি মার্চে দেশে ফিরে লকডাউনে আটকা পড়েছেন। দেশে ফেরার সময় সৌদি এয়ারলাইন্সের রিটার্ন টিকেট কাটেন তিনি। কিন্তু এখন তাকে ফিরতি টিকেট দেয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেতে না পারলে তার চাকরি থাকবে না। তাই নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

খুলনার ইমরান আহমেদ জানান, তাকে সৌদি এয়ারলাইন্স ৫ অক্টোবরের টিকেট নিতে বলছে। অথচ তাকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সে দেশে ফিরতে হবে। এখন তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

বিক্ষোভের সময় অনেকেই চাকরি হারানোর আশঙ্কার কথা জানিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। টিকেট রিইস্যু করতে সৌদি এয়ার বাড়তি ২৫ হাজার টাকা দাবি করছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

বরগুনার সৌদি প্রবাসী আবু হানিফ বলেন, আমি কয়েক মাস ধরে দেশে আটকা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছি। প্রতিদিনই ফিরতি টিকেটের তারিখ জানতে সৌদিয়ার অফিসে আসছি। তারা তারিখ দিতে পারছে না। ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

টিকেট প্রত্যাশিদের সড়ক অবরোধের কারণে গোটা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা রাস্তা থেকে সরে আসেন। সেখান থেকে মিছিল করে তাদের একাংশ মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে ও অন্য অংশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে গতকাল দুপুরে শাহজালালে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে আসে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচলে টানাপড়েনের বিষয়টি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, এতদিন সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের আকাশপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ফ্লাইট শুরু করেছে। আমরা চাচ্ছিলাম সৌদি আরব থেকেও ফ্লাইট শুরু হোক।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স আমাদের কাছে অনুমোদন চায়। আমরা অনুমতি দিয়েছি। আমাদের এয়ারলাইন্সও সে দেশে যেতে পারবে এই শর্তে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। কিন্তু জানতে পারলাম, বিমানকে চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিমানকে অনুমোদন না দেয়ায় অনেকেই চাচ্ছিলেন সৌদিয়ার অনুমোদন বাতিল করা হোক, কিন্তু আমরা সিভিল এভিয়েশন থেকে বাতিল করিনি। বেবিচক চেয়ারমান বলেন, আমাদের বিমানও যেন যেতে পারে, সে চেষ্টা করছি। বিমান থেকে জানতে পেরেছি, তারা এখনো অপারেশনের অনুমতি পায়নি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশিদের ফিরে যেতে সৌদিয়া যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। তবুও যেন প্রবাসীরা ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের বিমান বাংলাদেশও যেন যেতে পারে সে জন্য কাজ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App