×

সারাদেশ

প্রশংসা-সমালোচনা সঙ্গী করেই এগোচ্ছেন চসিক প্রশাসক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২৪ এএম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। কেউ বলছেন তিনি অল্প সময়ে কী করে সব সমস্যার সমাধান করবেন, আবার কেউ বলছেন তার স্বল্পমেয়াদে যতটুকু সম্ভব ততটুকু যেন তিনি করে দেখান। তার কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশংসা-সমালোচনা দুটোই রয়েছে।

গত ৬ আগস্ট দায়িত্ব নিয়েই তিনি নাগরিক স্বার্থে নানা উদ্যোগের বাস্তবায়নে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিগত এক মাসে চসিকের রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা ও ফুটপাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নানা সমস্যার সমাধানে নিজে স্কুটি চালিয়ে শুরু করেছেন ‘ক্যারাভান কর্মসূচি’। তবে এরই মধ্যে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কিছু কর্মকর্তাকে বদলি, রাতের পরিবর্তে দিনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু, সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে বাণিজ্যিকীকরণের অভিযোগে বিপ্লব উদ্যানের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের খোলা জায়গায় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্মাণাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থগিত ও পুরাতন সার্কিট হাউসের সামনে থেকে শিশুপার্ক সরানোর উদ্যোগের বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে।

আবার বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই ফুটপাতে ব্যবসা বসানোর বিষয় নিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় হকার্স নেতাকে শাসানো, চসিকের নিজস্ব পেট্রল পাম্প বাদ দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তেল কেনার মতো সিদ্ধান্তগুলো সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে আলোচনা আর সমালোচনাকে সঙ্গী করেই একটি বাসযোগ্য পরিচ্ছন্ন মানবিক নগর বিনির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসক সুজন। সাধ থাকলেও সময় সীমিত খোরশেদ আলম সুজনের। এই সীমিত সময়ে তিনি পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেনÑ সেদিকেই দৃষ্টি নগরবাসীর। অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে খোরশেদ আলম সুজন ভোরের কাগজকে বলেন, চসিকের একটি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স থেকে তেল চুরির দায়ে এক চালককে বরখাস্ত করেছি। চুরি করা তেলের দশ গুণ জরিমানা আদায়ের জন্য বলেছি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন চলতে থাকবে। বদলি কার্যক্রম প্রতিদিনই চলছে।

ক্যারাভ্যান কর্মসূচির সফলতা নিয়ে তিনি বলেন, সড়ক-জনপথ, ড্রেন-ফুটপাত নিয়ে জনগণের দুর্ভোগের শেষ নেই। সভা-সমিতি করে কী হবে? নগরবাসীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের কষ্টের কথা শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে হবে। সেচিন্তা থেকেই ক্যারাভ্যান কর্মসূচি চালাচ্ছি। এর মাধ্যমে নাগরিক সমস্যাগুলোর তড়িৎ সমাধান হচ্ছে। সড়ক সংস্কার ও বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, নগরীর পোর্ট কানেক্টিং রোড ও স্ট্র্যান্ড রোডের বেহাল অবস্থা ছিল। মানুষ প্রতিদিন ক্ষোভ প্রকাশ করত। রাস্তা ২টির ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মেরামত শুরু করেছি। রাতের বেলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কেউ দেখত না। এতে কর্মীদের মধ্যে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এক জায়গায় দিনে ৩/৪ বার করে পরিষ্কার করা হচ্ছে। হকার নেতাকে শাসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ফুটপাতে বিকাল ৩টায় থেকে বসার কথা থাকলেও হকাররা বেলা ১১টায় ব্যবসা শুরু করে দেয়।

হকারদের শৃঙ্খলায় আনার জন্য কাজ শুরু করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দখলদার তুই রাস্তা ছাড়, রাস্তা কি তোর বাপ-দাদার? ফুটপাত কি তোর বাপ-দাদার?’ এই স্লোগানে হকারদের শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। হকাররা পথচারীদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। বিকাল ৩টায় সে একটা টুল নিয়ে আসবে, একটি হ্যাঙ্গারে তার জিনিস ঝুলাবে। রাত ৮টায় পণ্য নিয়ে চলে যাবে।

চসিককে আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের মাধ্যমেও চসিকের আয় বাড়ানো যায়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও ফলমন্ডিকে মডেল হিসেবে নিয়েছি।

প্রতিটি দোকান সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ২৫ টাকা দরে প্লাস্টিকের বস্তা কিনবে। বিনোদন কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নগরে ক্রমশ খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। নগরের বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যক্ত মাঠগুলো সংস্কার করে খেলার মাঠে পরিণত করা হবে। নগরের বিভিন্ন স্পটে পানির কল বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। চসিক প্রশাসক সুজন তার পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন এমন প্রশ্নে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ ভোরের কাগজকে বলেন, উনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। চসিকের অচলায়তন ভাঙার চেষ্টা করছেন। এটা ইতিবাচক।

ক্যারাভান সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। নতুন কোনো প্রকল্প না নিয়ে তিনি চসিকের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করতে পারলে নগর অনেকটা সুন্দর হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App