×

জাতীয়

নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে ব্রুনাইয়ে হচ্ছে মানবপাচার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:২৪ পিএম

নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে ব্রুনাইয়ে হচ্ছে মানবপাচার

বাংলাদেশ ও ব্রুনাই

ব্রুনাইতে বাংলাদেশি মালিকানায় প্রায় ৩ হাজার কোম্পানি নিবন্ধিত আছে। যার অধিকাংশই নামসর্বস্ব। এ সমন্ত কোম্পানি ভূয়া বানোয়াট প্রকল্প দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রুনাই থেকে কর্মসংস্থান ভিসা নিচ্ছে। এসব কোম্পনীর মূল কাজ হচ্ছে দালালদের মাধ্যমে দেশে এসব ভিসা বিক্রি করা। ব্রুনাই যেতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার্য করা থাকলেও প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একজন কর্মীকে সেখানে যেতে হচ্ছে। আর এসব কর্মকাণ্ডের অন্যতম এক মূলহোতা মেহেদী হাসান বিজন। আর তারই অন্যতম সহযোগী শেখ আমিনুর রহমান হিমু।

ব্রুনাইয়ের মানব পাচারের মুলহোতা মেহেদী হাসান বিজনের অন্যতম সহযোগী শেখ আমিনুর রহমান হিমুসহ (৫৫) মানবপাচার চক্রের ৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে.কর্ণেল রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ব্রুনাইয়ে মানব পাচারের ঘটনায় অসংখ্য ভিকটিম র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে অভিযোগ করে। তাদের প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ব্রুনাইয়ে মানব পাচারের মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজন ও আবদুল্লাহ আল মামুন অপুর অন্যতম সহযোগী হচ্ছে শেখ আমিনুর রহমান হিমু। তিনি দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে ছিলেন। মেহেদী হাসান বিজনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিজনের চাহিদানুযায়ী দেশ থেকে অবৈধভাবে ব্রুনাইতে মানবপাচার করতেন তিনি। তাকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত ছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার দুপুরে শেখ আমিনুর রহমান হিমুকে কাফরুল থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তার দেহ তল্লাশী করে একটি লাইসেন্সকৃত বিদেশী পিস্তল ও ২টি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। এছাড়াও তখন তার আরো দুই সহযোগী মো. নুর আলম (৩৬) ও বাবলুর রহমানকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রুনাইয়ে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক অবস্থান করছে এসমস্ত শ্রমিকদের একটি বড় অংশ মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে ব্রুনাইতে, বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আইনানুসারে ব্রুনাইতে একজন কর্মী সর্বোচ্চ দুবছর অবস্থান করতে পারেন। তবে দু বছরে অভিবাসন ব্যয়ের টাকা তুলতে না পেরে ভিসার মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে গেলে দেশে না ফিরে গিয়ে মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে দুহাজার ব্রনাই ডলার দিয়ে পার্শবর্তী সারওয়াক প্রদেশ হয়ে মালেশিয়ার পাচার হয়ে যাচ্ছে।

মালেশিয়াতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নামে বর্তমানে কোন ভিসা দেয়া হয় না। মূলত ব্রুনাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানবপাচার কার্যক্রমের রুট ও গন্তব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্ট, বাংলাদেশী দালাল মিলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হয়ে কাজ করছে। এদের উদ্দেশ্য হলো শ্রমিকদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, শারীরিক নির্যাতন করা ও তাদেরকে বেকার রেখে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা, যাতে তাদের ওয়ার্ক ভিসার বিপরীতে এভাবে নিরম্ভর কর্মী আনতে পারে। বিদেশের মাটিতে স্বদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও নির্যাতনসহ বহুমুখি অপরাধ প্রবণতার কারণে ব্রুনাইয়ে সক্রিয় ভিসা দালাল চক্রের মূল হোতা মেহেদী হাসান বিজনসহ ৭ জনের পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্থণালয়কে অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মেহেদী হাসান বিজনসহ ৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করে। তার নামে দেশে ২০টি মামলা হয়েছে।

শেখ আমিনুর রহমান হিমু ব্রুনাইয়ে চাকুরী দেয়ার নাম করে ৪০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গত ২০১১ সালে তিনি মেহেদী হাসান বিজনের কোম্পানীর নামে ভূয়া ডিমান্ড লেটার দিয়ে ৬০ জন ব্রুনাইয়ে পাঠায়। তারা ব্রুনাইয়ে গিয়ে কোন কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে নিজ খরচে দেশে ফিরে আসে। এখানে উল্লেখ্য যে, তার নিজের কোন রিক্রুটিং লাইসেন্স না থাকলেও নজরুল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ও হাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল আরএল ব্যবহার করে ব্রুনাইয়ে মানব পাচার করে আসছিল। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App