×

সারাদেশ

ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বদলে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০৩ পিএম

ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বদলে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র
ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বদলে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র

ছবি: প্রতিনিধি

ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বদলে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র

ছবি: প্রতিনিধি

ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বদলে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র

ছবি: প্রতিনিধি

দুর্নীতির পোকায় খাচ্ছে শত কোটি টাকার প্রকল্প

বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তীব্র স্রোতে রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা। বছরের পর বছর নদী ভাঙনের ফলে নতুন নতুন গ্রাম থেকে চর হচ্ছে। এতে ঘর-বাড়ি ফসলি জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। অসহায় মানুষগুলো তাদের পৈতৃক ভিটে মাটি হারিয়ে হচ্ছে নিঃস্ব। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।

কয়েক দিনে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫ শত পরিবারের ঘরবাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কাঁচা পাকা রাস্তাঘাট নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙনে অসহায় মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন রাস্তার দুপাশে, উঁচুস্থানে, আশ্রয়ন প্রকল্পে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ভাঙনের মুখে বিলীন হওয়া গ্রামগুলো হলো রৌমারী উপজেলার ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, খেদাইমারী, পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাইসপাড়া, বলদমারা, পশ্চিম পাখিউড়া ফলুয়ার চর, পালেরচর, ধনারচর, দিগলাপাড়া, তিনতেলী বাগুয়ারচর, বাইটকামারী ধনারচর, দিগলাপাড়া। এক একটি পরিবার কয়েক দফায় নদী ভাঙনে শিকার হয়েছে। এরকম পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। যেভাবে ভাঙন এগিয়ে চলছে তাতে জরুরি কোন পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে উপজেলা সদরে ঢুকে উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

[caption id="attachment_243568" align="aligncenter" width="700"] ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনের কবল থেকে উপজেলা শহর রক্ষার জন্য কয়েক দফা অপরিকল্পিত ভাবে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও বাস্তবে তেমন কোন কাজে আসছে না। চলছে দুর্নীতি আর লুটপাট। নদী ভাঙনে মানুষ দিন দিন নিঃস্ব ও ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে রৌমারী উপজেলাটি সম্পূর্ণরূপে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

রৌমারীর পালেরচর গ্রামের ছোরমান মাঝি বলেন, আমাদের এক সময় অনেক সম্পত্তি ছিল। বর্তমানে সব নদীতে ভেসে গেছে। রাস্তার ধারে পলিথিন কাগজের ছাপড়া দিয়ে পোলাপান নিয়া কোন মতে বাইচা আছি।

উত্তর ফলুয়ারচর গ্রামের জব্বার, আছমা বেগম, নুরুন্নবী, হাজেরা, কাওসার, আমজাদ, কছিম, রহমত, আক্কাছ, জবেদ, সামছুল, আকবর, রহিম তারা জানান, দিনের পর দিন নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদ-নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। তবে প্রতি বছরে নদী ভাঙনে আমাদেরকে আতঙ্কে থাকতে হয়।

[caption id="attachment_243570" align="aligncenter" width="700"] ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন ফসলি জমি। ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

আমরা শুনেছি, বর্তমান সরকার মানবতার মা এ নদের বাম তীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য ৪ শত ৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রকল্প টেন্ডার হয়েছে। দ্রুত কাজটি করলে হয়তো আমরা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবো।

বন্দবেড় ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ও বন্দবেড় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কাদের ও সিএসডিকে পরিচালক আবু হানিফ মাষ্টার ও খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাধান শিক্ষক ও বন্দবেড় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মাষ্টার বলেন, নদের ভাঙনের কবলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসাসহ হাজার হাজার পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রৌমারী উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্যাহ বলেন, ১ বছরে রৌমারী উপজেলার প্রায় ১ হাজার পরিবার নদী ভাঙনে উদ্ধবাস্তু হয়েছে। এসব পরিবারের একটি বড় অংশ ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বস্তিতে বসবাস করছে। উদ্ধবাস্তু পরিবারের পুর্নবাসন ও নদী ভাঙন রোধ না করলে আগামী ২/৩বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী নামের উপজেলাটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দুটি উপজেলার নদী ভাঙন রোধে টেন্ডার হয়েছে। দ্রুতগতিতে কাজ করলে হয়তো রৌমারী উপজেলাটি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App