×

জাতীয়

দুদকের ২২ মামলায় শিগগিরই চার্জশিট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

ক্যাসিনোকাণ্ডে হবে নতুন মামলাও

এক বছর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। দেশজুড়ে তোলপাড় করা সেই সাঁড়াশি অভিযানে বেরিয়ে আসে ঢাকার ক্লাবপাড়ার ভয়ঙ্কর চিত্র ও রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ীসহ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। পাওয়া যায় সিন্দুকভর্তি অবৈধ নগদ টাকা আর হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির তথ্য। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘শুদ্ধি’ অভিযানে সক্রিয় হয়ে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। প্রথমে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলেও পরবর্তীতে এ তালিকায় যুক্ত হয় আরো ২ শতাধিক ব্যক্তির নাম। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২২টি মামলা করে দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন সংস্থাটি। মাঝে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকলেও বর্তমানে দ্রুত গতিতে চলছে তদন্ত কার্যক্রম। খুব শিগগিরই ২২ মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র বলছে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ পর্যন্ত দুদক বন্ধই ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে দুদকের কর্মকর্তারা ক্যাসিনো নিয়ে তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি। এরপর জুনে দুদকের কার্যক্রম ফের শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাড়া মেলেনি। কারণ এ সময়ে কাউকে তলব করা যায়নি। আবার মামলা অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য দুদকের কর্মকর্তারা বাইরেও যেতে পারেনি। যা বর্তমানেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যেও অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চলছে ক্যাসিনোবিরোধী তদন্ত কার্যক্রম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্যাসিনো মামলার অনুসন্ধান ও তদন্ত টিমের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের তালিকায় নাম আসা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা সম্রাট, জিকে শামীম, খালেদ এবং আর্থিক ও বিনিয়োগ খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচারে সংশ্লিষ্ট প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) ২৫ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই চার্জশিট দেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে করা ২২ মামলার তদন্ত শেষ করতে কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সম্পদের মামলা আদালতে পাঠাতে চায় দুদক। এ ২২ মামলায় যুক্ত ২৫ প্রভাবশালীর ৬৫৫ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করেছে দুদক। তদন্তে ২৫ জনের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে দেশের বাইরে কয়েকটি রাষ্ট্রে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেটিও স্থগিত হয়ে আছে। করোনা ভাইরাসের শুরুতে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই সফর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ফলে ক্যাসিনোকাণ্ডের অনুসন্ধানাধীন বিষয়গুলো ঝুলে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও দুদক সূত্র বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে খুব শিগগিরই আরো কয়েকটি মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে ক্যাসিনোকাণ্ডের অনুসন্ধান ও তদন্তের টিম লিডার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, করোনার কারণে আমরা ৩ মাস কোনো কাজ করতে পারিনি। এখন অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষে আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একই সঙ্গে তদন্তকাজ শেষে কয়েকটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তদন্তের প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকার পরও করোনা পরিস্থিতির কারণে সফরটি হয়নি। এখনো করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে সফরটি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ‘বিতর্কিত’-দের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ জন্য পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দুদকের এই টিম ৩ সংসদ সদস্যসহ ২৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

জানা যায়, র‌্যাবের সেই সাড়া জাগানো অর্ধশত অভিযানে ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ২০টি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। আরো কয়েকটির তদন্ত চলছে। তবে করোনা সংকটসহ নানা কারণে আলোচিত এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। গ্রেপ্তারকৃত প্রভাবশালী ও তাদের সহযোগীরা গত এক বছর পলাতক থাকার পর আবার ফিরে আসছে তাদের হারানো সাম্রাজ্যে। এছাড়া অভিযানের কারণে যারা গা ঢাকা দিয়েছিলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। ফিরছেন জনসম্মুখে। তাদের কেউ কেউ জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গা ঢাকা দেয়া সেসব প্রভাবশালীদের মধ্যে কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ও বর্তমানে মুক্ত থাকা কতিপয় তথাকথিত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ নিজ নিজ এলাকায় সহযোগী ক্যাডারদের ফের সক্রিয় করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান প্রথম শুরু হয় রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে। অভিযানের দিন সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের আরো অনেক নেতাকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন টপ টেন্ডারবাজ এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম, ক্যাসিনোর মূল হোতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান প্রমুখ। পরে তাদের যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া মোহাম্মদ শফিফুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সমন্বয়কারী সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, আলোচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক ওরফে মনজু।

সূত্র জানায়, প্রায় ৩ মাস ধরে ক্যাসিনোবিরোধী মোট ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩২টি র‌্যাব ও ১৭টি অভিযান পুলিশ পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ২৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২২২ জন ও ঢাকার বাইরে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী সেই সাঁড়াশি অভিযানে ৮ কোটি ৪৫ লাখ নগদ টাকা, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক জব্দ করা হয়। এছাড়া ৮ কেজি স্বর্ণ, ২২টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App