আলাউদ্দীনের সাফল্যে অন্যরাও পাবদা চাষে হচ্ছেন আগ্রহী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:১৪ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি
ছবি: প্রতিনিধি
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার দেশিয় প্রজাতির পাবদা মাছ চাষ করে পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত এলাকা ডুমুরিয়া। এখানকার অধিকাংশ চাষিইই চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত। এমন একটি এলাকায় আলাউদ্দীন দেশিয় পাবদা চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
তিনি যেমন সফল হয়েছেন তেমনি তার এ উদ্যোগ এলাকার চাষিদের মাঝে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আলাউদ্দীনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক চাষিই সুস্বাদু পাবদা চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
পাবদা চাষি আলাউদ্দিন বলেন, সঠিক চাষ পদ্ধতি না জানার কারণে প্রথমবার তাকে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়। তবে তিনি দমে যাননি।
পরবর্তীতে তিনি ডুমুরিয়া ডুমুরিয়া মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করে পরের বছর দ্বিগুণ উৎসাহে দেশি পাবদা চাষ করেন। এবার পাবদা চাষ তাকে নিরাশ করেনি। পাবদার চাষ তার কাছে আলাদীনের চেরাগের মতোই আবির্ভূত হয়।
আলাউদ্দীন জানান, দ্বিতীয় বছর আমি পাবদা বিক্রি করে প্রথমবারের লোকসান তুলে আরও প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ করি।
[caption id="attachment_243583" align="aligncenter" width="700"] ছবি: প্রতিনিধি[/caption]এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা মৎস্য দপ্তর হতে তাকে ১০,০০০ টি পাবদা মাছের পোনা ও ২০০ কেজি পাবদা মাছের খাবার প্রদান করা হয়। তিনি উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিজে আরও ২টি পুকুর নেন। সর্বমোট ৫ লক্ষ দেশি পাবদার পোনা মজুদ করেন। ৫-৬ মাস লালন পালন করার পর তিনি একটি পুকুর থেকে এ পযর্ন্ত সাড়ে ৫ লাখ টাকার পাবদা বিক্রি করেছন। এ বছর তিনি ১৪-১৫ লাখ টাকার পাবদা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, সব খরচ বাদে তার প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা লাভ হবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, পাবদা একটি সুস্বাদু মাছ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাবদা মাছে আছে আমিষ ১৯.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১১৪ কিলোক্যালরি, চর্বি ২.১ গ্রাম, ফসফরাস ২১০ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম ৩১০ মি. গ্রাম, লৌহ ১.৩ গ্রাম, কোলিন ১০১৮ একক
এ ছাড়াও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। নিয়মিত পাবদা মাছ খেলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে। তাছাড়া এই মাছ আমাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। পাবদা মাছ আমাদের দৈহিক গঠনে সাহায্য করে এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করে। এই মাছে রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে ফসফরাস। ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ফসফরাস মিলিত হয়ে হাঁড় ও দাঁতের তন্তু তৈরি করে। বাজারে পাবদা মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
পাবদা মাছ সম্প্রসারণে মৎস্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি দেশীয় মাছের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার পাবদা চাষির উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলার দেশিয় প্রজাতীর পাবদা চাষির প্রদর্শনীটি আমি পরিদর্শন করে মাছের নমুনায়ন করেছি। তিনি একজন ভালো চাষি। তার মাধ্যমে ডুমুরিয়ার আরো অনেক চাষি পাবদা চাষে আগ্রহী হবে।