×

অর্থনীতি

আইন ব্যাংকিং খাতে নতুন অস্থিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৬ এএম

আইন ব্যাংকিং খাতে নতুন অস্থিরতা

ব্যাংক ঋণ।

বর্তমানে স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ দিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

করোনা ভাইরাস মহামারিতে থমকে গেছে অর্থনীতি। একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ব্যাংক খাত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের মতো করোনা মহামারিতে ক্ষতিতে পড়েছে ব্যাংক খাতও। তার ওপর ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক খাতকে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। এতে একদিকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের চাপ থাকলেও আদায় হচ্ছে না। ফলে কমে গেছে ব্যাংকের আয়। এছাড়া খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মুনাফা কমে যাওয়াসহ নানা সংকটে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। মহামারির এ ছোবলের মধ্যেই নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক তোড়জোড় চালাচ্ছে অস্থাবর সম্পত্তি আইন বাস্তবায়নের। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্থাবর সম্পত্তি আইন বাস্তবায়ন হলে আবার লুটপাটের রাজত্ব শুরু হবে। এ আইন ব্যাংকিং খাতের জন্য বুমেরাং হবে বলে মনে করছেন তারা।

সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার নতুন বিধান চালু হবে। সিকিউরড ট্রানজেকশন (অস্থাবর সম্পত্তি) নামে নতুন এ আইনের খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে ওয়েবিনারে সভাও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইন চ‚ড়ান্ত করতে আগামী মাসে আবারো সভা করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। আর এ আইন প্রণয়নে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক। আইনটি কার্যকর হলে স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পদ বন্ধক হিসেবে বিবেচনা করতে পারবে ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখা হচ্ছে। এর পরেও দিন দিন খেলাপি বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই ব্যাংকগুলো আদায় করতে পারছে না। প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হচ্ছে। যদিও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নানামুখী পদক্ষেপে এ অঙ্ক অনেকটা কমতে শুরু করেছে। তাদের মতে, অস্থাবর সম্পত্তি আইন বাস্তবায়ন হলে আরকেটা লুটপাটের রাজত্ব শুরু হবে। তবে অনেকে মনে করছেন, কিছু অস্থাবর সম্পত্তি গাড়ি, প্লেন বা হেলিকপ্টার, বন্ড বা সঞ্চয়পত্র এবং গহনা ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করে দেয়া যেতে পারে। অন্য অস্থাবর সম্পত্তির মাধ্যমে ঋণ দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে এ আইন ব্যাংকিং খাতের জন্য বুমেরাং হবে।

সূত্র মতে, বর্তমানে ঋণ নিতে জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখতে হয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ভবনের পাশাপাশি ভবন উপকরণ এবং সংযুক্ত মালপত্রও জামানত হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে একটি কারখানায় স্থাপিত যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, গহনা, জমির ফসল, আসবাবপত্র প্রভৃতির বিপরীতে ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে। তবে এসব সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ব্যাংক এ ঋণ দেবে।

জানা গেছে, অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক আইন করার জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি। আইনের খসড়া তৈরিতে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগ। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি, এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও আইন বিভাগের মতামত নেয়া হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়নে ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল এ আইন বাস্তবায়নে বিদেশে ট্যুরও করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের যুক্তি, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় দেয়া ঋণ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর। তবে বাংলাদেশে জামানত হিসেবে শুধু স্থায়ী সম্পদ বিবেচনায় নেয়ার ফলে উৎপাদন সক্ষমতার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করে না। এতে করে অনেক সময় ঋণ ফেরত না এসে খেলাপিতে পরিণত হয়। এমন বাস্তবতায় স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ বন্ধকীর আওতায় আনলে স্বচ্ছতা বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংকের পরিচালক বলেন, কারখানার যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, জমির ফসল ও আসবাবপত্র কোনোভাবেই ব্যাংকের পক্ষে বন্ধক রেখে ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। এর কোনো স্থায়িত্ব নেই। এটা নষ্ট হলে ব্যাংক কার কাছে যাবে ঋণের টাকা তুলতে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। কারণ জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখেও ব্যাংকগুলোকে অনেক ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হয়। তাদের মতে, এ আইন বাস্তবায়ন একটি অবাস্তব চিন্তা। যা প্রভাবশালীদের লুটপাটের রাজত্ব কায়েমের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ দিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এরপর আবার এ আইন বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকগুলোকে আরো বিপাকে পড়তে হবে।

তাই অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধকী আইন ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দুয়েকটি অস্থাবর সম্পত্তিকে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করে দেয়া যেতে পারে। যা ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে হতে পারে। যেমন- গাড়ি, প্লেন বা হেলিকপ্টার, বন্ড বা সঞ্চয়পত্র এবং গহনাকে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গহনাকে অবশ্যই ব্যাংকের ভল্টে গচ্ছিত রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App