×

সারাদেশ

সিংগাইরে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের টাকায় নয়-ছয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৫৩ পিএম

সিংগাইরে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের টাকায় নয়-ছয়

ফাইল ছবি

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির পর এবার স্লিপ ফান্ডের টাকায় কেনাকাটার নামে হয়েছে লুটপাট। বিধিবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার ৯৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুযায়ী স্লিপ ফান্ডের টাকা বরাদ্দ হয়। সে ক্ষেত্রে স্কুল ভিত্তিক তিন ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার,৭০ হাজার ও ৮৫ হাজার টাকা করে পায় স্কুলগুলো । বরাদ্দপ্রাপ্ত টাকা থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ আইটি কর্তনের পর বাকি টাকায় স্ব-স্ব স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সিংগাইরে ঘটেছে তার উল্টো। স্লিপ ফান্ডের বরাদ্দকৃত টাকা স্কুলের পক্ষ থেকে উত্তোলন করে উপকরণ কেনার জন্য জমা দেয়া হয় শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ক্লাস্টার প্রধানদের কাছে । যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এতে স্কুলপ্রতি সেলাই মেশিন ক্রয়- ৮ হাজার, হারমোনিয়াম সাড়ে ১৭ হাজার, প্রিন্টার ১০ হাজার, মডেম ৩ হাজার ও পেনড্রাইভ দেড় হাজার টাকা দাম ধরা হয় । এর মধ্যে শুধু হারমোনিয়াম ছাড়া অন্য সব নিম্নমানের উপকরণ স্কুলগুলোতে দেয়া হয়েছে। এ সমস্ত বিভিন্ন উপকরণ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজার মূল্যের চেয়ে এসব পন্যের দাম ধরা হয়েছে দু’তিন গুণ বেশী। কেনাকাটায় নয়-ছয় করে বাড়তি অর্থ সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে অন্যান্য অফিসারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন। এদিকে, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী সজ্জিত করণে স্কুল প্রতি ৯ হাজার পঞ্চাশ টাকা বরাদ্দ হয়। যা থেকে মিনি বাস্কেট বল সাড়ে তিন হাজার টাকা, পুশপিন ১ হাজার, হোয়াইট বোর্ড দেড় হাজার ও ম্যাট ক্রয়ে ৩ হাজার পঞ্চাশ টাকা দেখানো হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক স্কুলে প্রাকৃতিক দুযোর্গকালীণ উপকরণ ক্রয় ও কিছু কিছু স্কুলে ওয়াশব্লক মেরামত এবং রুটিন মেইনটেন্যান্সের কাজে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। স্কুলগুলোতে কন্ট্রাকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার তৈরিতে ১৩ হাজার, বৈদ্যুতিক মেরামত সাড়ে ৭ হাজার ও নামজারিতে আড়াই হাজার টাকার কাজেও হয়েছে কারচুপি। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও সিলেবাস বানিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। প্রতিবাদকারী শিক্ষকরাও দুর্নীতিবাজ রোষানলে পড়ে হন হয়রানির শিকার। যে কারণে অনেকে এবার দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। ৮১ নং দেহনাখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলসী রানী সরকার বলেন, মাস্ক, সাবান ও ব্লিচিং পাউডার ছাড়া স্লিপের টাকার যাবতীয় উপকরণ এটিইও ফারুক স্যার আমাদেরকে কিনে দিয়েছেন। এর জন্য স্যারকে ৪২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র মন্ডল বলেন, টিইও, এটিইও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে মিডিয়া করে এ কাজগুলো করেছেন। বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে কন্ট্রাক অনুযায়ী তাদের পৌঁছে দেয়া মালামাল আমরা সিংগাইর থেকে সংগ্রহ করেছি। এ প্রসঙ্গে সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম ও মাহফুজা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে সদর ও গোলাইডাঙ্গা ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা এটিইও মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিদফতর থেকে আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে কিছু কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন। শিক্ষকদের নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস ও আমাদের অফিসের মাসিক মিটিংয়ের রেজুলেশনের আলোকে কতগুলো আইটেম শিক্ষকদের নেয়ার জন্য কমন করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের লাভের কথা চিন্তা করে তারা নিজেরা একত্রে জিনিসগুলো কিনেছেন। আমরা কেনা কাটার সাথে জড়িত না, জাস্ট সমন্বয় করে দিয়েছি। যাতে কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়। সিংগাইর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নার্গিস আক্তার বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইটেমগুলো ক্রয় করার জন্য শিক্ষকদের আহবান করেছি। করোনাকালীণ সময়ে তারা রাজি না হওয়ায় দামটা জেনে এটিইও সাহেবের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে দামের সাথে ভ্যাট ধরে সমন্বয় করায় একটু বেশী মনে হতে পারে। এ বিষয়ে নেগেটিভ কিছু না লিখে স্কুলগুলোতে ওয়াশব্লক , মেইনটেন্যান্স ও প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর সজ্জিতকরণের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন তিনি। এ ব্যাপারে, মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারী বলেন, স্কুলগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী স্কুল ম্যানেজিং কমিটি মিটিং করে স্লিপের টাকা থেকে বাজারদর যাচাই-বাছাই করে উপকরণ ক্রয় করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এসব উপকরণ ক্রয় করা বা সরবরাহ করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেও তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App