×

সারাদেশ

সবুজের বনসাই যাচ্ছে ভারত ও মালয়েশিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৪ এএম

সবুজের বনসাই যাচ্ছে ভারত ও মালয়েশিয়া

বনসাই

ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি বাড়তি আগ্রহ ছিল বনসাই শিল্পী কে এম সবুজের। ১৯৯৬ সালে সিলেটে গিয়ে এক নার্সারিতে একটি বনসাই দেখেন। সেখান থেকে কয়েকটি চারা কিনে শুরু করেন বনসাই তৈরি। এখন তার বাগানে হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের বনসাই আছে। এরই মধ্যে তার সৃজিত বনসাইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া ও ভারত। রপ্তানি হচ্ছে অন্তত ২০ লাখ টাকার বনসাই।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী যুবকরা বনসাই সংগ্রহের পাশাপাশি বেকারত্ব ঘোচাতে নিচ্ছেন নানা প্রশিক্ষণ। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শৈল্পিক এ বনসাই শিল্পকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চর পাথালিয়া গ্রামের সরকারি চাকরিজীবী কে এম সবুজ। পুরো নাম খান মুহাম্মদ সবুজ। থাকেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায়। সেখানেই এক বিঘা জমিতে তার স্বপ্নের বনসাই বাগান। তার বনসাই বাগানে গাছের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বনসাই চাষ করছেন। তার হাতে তৈরি লাখ লাখ বনসাই ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে। বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে ছাদেও রয়েছে ২ হাজারের বেশি বনসাই।

সবুজের বনসাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মালয়েশিয়া ও ভারতে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় বরই, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা ও নিমগাছসহ বেশ কিছু বনসাই গাছ বিক্রি করেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সবুজের মাত্র ১০০ টাকার বিনিয়োগ ২৪ বছরে এখন ১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তার কাজে স্ত্রী, মা ও শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই সহযোগিতা করেন। দিন দিন বাড়ির ছাদ ছাড়াও জমিতে বনসাই বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। বাগানে কাজ করছেন ১২ জন শ্রমিক। বেশ কয়েকটি একক বনসাই প্রদর্শনীতে তার বনসাই আলোচিত হয়। ইতোমধ্যে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পদক। ভারত ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি : কে এম সবুজ প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ টাকার বনসাই ভারত ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেন। তিনি বলেন, তার কাছ থেকে কেনা বনসাই গাছ ক্রেতারা চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যান। সেখানে বনসাইগুলো জাহাজে নারকেলের ছোবড়া দিয়ে কস্টেপ মুড়িয়ে টবে রাখা হয়।

পরে গাছগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে হরমোন দিয়ে ফের টবে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সেখানে বনসাই থেকে নতুন পাতা গজায়। ১৯৯৬ সালের গোড়ার দিকে সিলেট শহরে এক নার্সারিতে একটি বনসাই দেখেন সবুজ। বাসায় ফিরে ভাইয়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে চারটি তেঁতুলের চারা কিনে বনসাই চর্চার যাত্রা শুরু করেন। পৈতৃক ভিটা গজারিয়া হলেও তার পুরো পরিবার ঢাকায় থাকে অনেক আগে থেকেই। পড়াশোনার পাশাপাশি বাসার ছাদ, বারান্দা ও আঙিনা একসময় ভরে যায় বনসাইয়ে। কিন্তু লাভবান হতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ১০-১২ বছর চলে যায়। পরিবারের সদস্যরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন একসময়। পরিবার থেকে একপর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি। ঠিক সে সময়টাতে একটা বনসাই ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করলে বদলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিবারের কাছে আবার ফিরে যান। তাদের কাছে বেড়ে যায় সবুজের কদরও। বড় পরিসরে নতুনভাবে শুরু করেন বনসাই উৎপাদন।

এরই মধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ঢাকা, মালয়েশিয়ার রেডিয়েন্ট, ভারতের সার্ক কালচার ও চীনের ঘুঞ্জু লায়ান ডিস্ট্রিক্ট নার্সারি এবং সিঙ্গাপুরের চায়না গার্ডেন থেকে।

দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে বনসাই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি শহুরে নাগরিক জীবনে আনতে পারে স্বস্তির পরশ- এমনটাই দাবি করেন বনসাই শিল্পসংশ্লিষ্টরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App