×

মুক্তচিন্তা

মানুষ বাঁচলেই দেশ বাঁচবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৩০ পিএম

দেশে নাকি দ্বিতীয় সংক্রমণ আসন্ন। গোড়ারটাই সামাল দেয়া যায়নি। যারা খুব বলছিল এসব বিদেশের রোগ বা দেশে ছড়াবে না, তাদের এখন দেখবেন না কোথাও। অন্ধ আর আজগুবি কথা বলার মানুষরাও উধাও। মাঠে আছেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী আর রোগীরা। যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় বা কী রূপ নিতে পারে ভাবাও কঠিন। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহর দেশের প্রাণকেন্দ্র আজ রেড জোনে। যে কাজগুলো আগে করলে হয়তো মানুষ ভালো থাকতে পারত তা হয়নি। আর মানুষও পারে বটে। এত কিছুর পরও দিব্যি বিনাবাধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের হাবভাব দেখলে মনে হয় পিকনিক চলছে। রোজ কারো না কারো চলে যাওয়ার খবর আরো উদ্বেগ বাড়ছে। তবে কি আমরা যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রাজিলের দিকে পা বাড়াচ্ছি? জানি না সরকারের কী পরিকল্পনা। তবে এটা জানি এখন নাকি বেশি কথা বলা নিষেধ। কেউ কিছু না বললে, না লিখলে, না চিন্তা করলে যদি সমস্যার সমাধান হতো সত্যি লিখতাম না। কিন্তু রাষ্ট্র বা দেশ মানে কী আসলে? মানুষ আছে বলেই তো রাষ্ট্র। দেশ, সরকার সবই তার অংশ মাত্র। মানুষ না থাকলে কিছু থাকে না। আর আজ সেই মানুষ দেশে-বিদেশে বড় অসহায়। আমরা বিশ্বাস করতাম, এখনো মনে করি আমেরিকা দুনিয়ার সব দেশের চেয়ে আগুয়ান। তাদের এক নম্বর দেশ হিসেবে ভাবা হয়। সেখানকার হাল দেখুন। নিউইয়র্কের মতো শহর মৃত্যুপুরী। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে তাদের আস্থা। তাদের বিশ্বাস। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা মরছে পাখির মতো। ধসে পড়েছে আমেরিকার অর্থনীতি। যে কোনো দেশে মানুষের মৃত্যু বেদনার। বিশেষত প্রাণঘাতী এক ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থ পদ্ধতির জন্য মহামূল্যবান জীবনের এমন হানি মানা যায় না। সঙ্গে কি এটাও বলা যায় না যে ট্রাম্পের মতো হামবড়া বদরাগী এক প্রেসিডেন্টও দায়ী? তিনি তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য একবার চীন, একবার ডঐঙ-কে দোষারোপ করছেন। কিন্তু একবারও বলছেন না আসলে কী করণীয় ছিল বা কী কী করলে মানুষ করোনা ও আসন্ন অভাবের হাত থেকে বাঁচতে পারবে? চীনের সরকারও দেখুন কেমন চুপ মেরে আছে। তাদের কথা শুনলে বা তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় করোনা যেন সামান্য সময়ের অযাচিত মেহমান। কেন এই ভাইরাস বেইজিং, সাংহাই পর্যন্ত গেল না আর গেলে কী তার হকিকত কিছুই বলছে না তারা। এদিকে গোড়াতে রাশিয়া চাপা দিলেও এখন আর পারছে না। মৃত্যুর হার, সংক্রমণের হারে রাশিয়া টপকে গেছে অনেক দেশকে। দিনে দিনে গভীর সংকটের মুখে চলে যাচ্ছে পুতিনের রাশিয়া। প্রমাণ হচ্ছে ধামাচাপা দিলে আর যাই চাপা থাক সত্য বা মৃত্যু চাপা থাকে না। অন্যদিকে আমাদের আবাসভ‚মি অস্ট্রেলিয়া আর পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডের দিকে দেখুন। এখানে এখন স্বাভাবিক পরিবেশ প্রায় ফিরে এসেছে। আমরা আমাদের কাজে ফিরে গেছি। এমন না যে এখানে সংক্রমণ ছিল না। শুরুতে মনে হচ্ছিল আমাদের এই ক্যাঙ্গারুর দেশে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর। শুরুতে সরকার তেমন পাত্তা দেয়নি বলে মনে হলেও পরে দেখলাম সময়মতো তারা ঠিকই তাদের কাজ শুরু করে। কাজগুলো খুব অসাধারণ কিছু না। তারা সঠিক সময়ে লকডাউন করে মানুষকে সাবধান করে কাজ শেষ করেনি। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ নামিয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা করার বিধান দেয়ায় তরুণ-তরুণীদের রোখা সম্ভব হয়েছে। জরিমানার পরিমাণটা শুনুন একবার। বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার সমান। সঙ্গে জেলে যাওয়ার ভয়। এত বড় ঝুঁকি নেয়া কি সম্ভব না কারো বুকের পাটা আছে তা নেয়ার? ফলে মানুষ সাবধানে থাকতে বাধ্য হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার আরো এক কাঠি এগিয়ে। তারা শুরুতেই তাদের দেশের সবকিছু বন্ধ করে দেয়ায় করোনা সুযোগ পায়নি মানুষের ভেতরে ঢোকার। ফলে সংক্রমণ যেমন দানা বাঁধেনি তেমনি মৃত্যুর হারও কম। যে কারণে এই দুই দেশ এখন সারাবিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠছে। কিন্তু তারপরও তারা থামেনি। বারবার বলা হচ্ছে সাবধান না হলে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। আর তা হবে ভয়াবহ। দেশের কথায় আসি। সবার জানা আছে বাঙালি এমন এক জাতি বাধ্য না হলে কখনো নিয়ম মানে না। তা এই বাধ্য করার কৌশল কী? দমন-নিপীড়ন বা জুলুমের জন্য সবসময় গালি খাওয়া সরকার আর পুলিশ হাতে-পায়ে ধরে থামাতে পারছে না বাঙালিকে। আমার মনে হয় মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা আর জেল দিলে সমস্যা হয়তো কিছুটা লাঘব হতো। জানি না কেন তা করা হচ্ছে না। এদিকে আমরা দেখছি রোজ হু হু করে বানের পানির মতো বাড়ছে সংখ্যা, বাড়ছে সংক্রমণ। যখন এই লেখাটা লিখছি আমার জন্মভ‚মি চট্টগ্রামে সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দীন আহমেদের পতœীসহ তাদের বাড়িতে তিনজন আক্রান্ত। আক্রান্ত হয়েছেন সাংবাদিক নাসির ভাইয়ের কন্যা। আরো কত যে লুকিয়ে আছে কে জানে। এ এক ভয়াবহ দানব। ওঁৎ পেতে আছে চারদিকে। কিন্তু সাধারণ নিয়মটাই মানুষ মানছেন না। কেন তারা এমন করছেন? মৃত্যুর হার কম বলে কি আমরা আজরাইলকে বাড়িতে ডেকে আনব? খুব স্বাভাবিক নিয়মে রাজনীতিকরা ব্যর্থ। কোনো দলের কোনো নেতাকে আমরা মাঠে দেখি না। তারা হয়তো বলবেন করোনাকালে আমরা কি মরতে যাব? বুকে হাত দিয়ে বলুন গোপনে একবার কি শপিংয়ে যাবেন না? না করেননি কোনো বাজার? কেউ বলছে না জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু করতে। স্বাভাবিক নিয়মে পাশে দাঁড়ানোর কাজের বদলে এখনো চলছে নিন্দার ঝড়। পরস্পরের বিরুদ্ধে গলাবাজি। আচ্ছা এটা ভাবা কি অন্যায় হবে যে সব দল মিলেই রাজি কিছু বলা, লেখা বন্ধ হোক? অন্তত এই একটি কাজে হয়তো তারা ঐক্যবদ্ধ। তাতে সবার সম্মান বাঁচবে। কিন্তু মরবে সাধারণ মানুষ। আমেরিকার মতো গণতন্ত্রের নামে বড়াই করা দেশে কালো মানুষ আর ওয়ার্কিং ক্লাসের মানুষ শ্রমজীবী মানুষ মরছে বলে কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। আমাদের দেশে শেখ হাসিনা আন্তরিক বলে মানুষকে তিনি নানাভাবে সামলে রেখেছেন এখনো। কিন্তু অজানা কারণে সবকিছু কেমন ঢিলেঢালা। স্বাভাবিকভাবেই আমরা উদ্বিগ্ন। একটা পজিটিভ বিষয় অবশ্যই বলব যে মানুষ কিন্তু ভয় পেয়েছে। সে ভয়কে আরো অনেক কিছুর মতো প্রাতিষ্ঠানিক করতে পারেনি সমাজ। প্রতিটি মিডিয়া তাদের সাধ্যমতো প্রচার করলেও কোথাও দানা বাঁধেনি। শুধু যদি পেটের দায় আর বাঁচার জন্য এমনটা হতো তবে যাদের মাঠে দেখছি তাদের বেশিরভাগের চেহারায় কিন্তু অভাবের ছাপ নেই। বরং মনে হতে পারে যেন মজা দেখার জন্য হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এই প্রবণতা এখনই বন্ধ করা দরকার। সত্যি বন্ধ করতে না পারলে কিন্তু এতদিনের ঘরে থাকা, এত সংযম সব নষ্ট হয়ে যাবে। এখন আর এ কথা বলার অবকাশ নেই আমরা সংক্রমণে পিছিয়ে। উপমহাদেশের দেশগুলো এখন ভয়াবহ বিপদের মুখে। ভারত, পাকিস্তান হিমশিম খাচ্ছে সামাল দিতে। আমাদের লড়তে হবে একা। এই যুদ্ধে কেউ কারো নয়। এটা যার যার নিজেদের যুদ্ধ। বাংলাদেশ এটা জানে কিন্তু মানে না। শুরুতে বলছিলাম আমাদের দেশে একটা রোগের নাম ভয়। সবাই যার যার জায়গা থেকে ভয় পাই আমরা। কোনো কারণ নেই সবকিছুর জন্য সরকারকে দায়ী করার। তারা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্তরিকতাও দেখতে পাচ্ছি আমরা। তাহলে কেন মানুষ বলতে পারবে না? লিখতে পারলে, বলতে পারলে বরং সাবধানতা বাড়বে। সজাগ করা সহজ হবে। গুজব, অকারণ উসকানি আর মিথ্যা বাদে মানুষকে ভয়মুক্ত রাখুন। এতে সবার লাভ। বাংলাদেশে কীভাবে এই ক্রান্তিকাল পেরুবে তার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ। মুখবন্ধ সমাজ, মুখবন্ধ মানুষের। এই সময় যদি প্রাণের আকুতি মনের ভয়ও জানাতে না পারে বাঁচবে কী করে সবাই? এর মধ্যে চলছে মুজিব কোটের লড়াই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তাদের কন্যারা কেউ পরিধান করলেও শিশু চোর নব্য হাইব্রিডের পরনে মুজিব কোট। একদিকে এরা অন্যদিকে কোভিড, এখন চোখের জ্বালা পেঁয়াজ। ভারতীয় পেঁয়াজের ঝাঁজে নাভিশ্বাস মানুষের। মানুষ না বাঁচলে কোন আদর্শ ধুয়ে পানি খাবে মানুষ? অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App