×

সাহিত্য

জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার পরিবর্তন রাঙ্গামাটির শিল্পীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:১০ এএম

জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার পরিবর্তন রাঙ্গামাটির শিল্পীদের

রাঙ্গামাটির নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। ফাইল ছবি।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি। ঘন সবুজ অরণ্যের এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশের মাঝখানে নদী আর লেকবেষ্টিত এক শান্ত শহর রাঙ্গামাটি। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা চোখ জুড়ানো জীবন্ত বিশাল ক্যানভাস। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য পাহাড়ি ঝরনার কলতানে মুখরিত এই অপরূপ রূপকে আরো রূপময় করে তুলেছে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরাসহ ১৪টি জনগোষ্ঠীর শিল্প সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চা। পাশাপাশি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পিলওয়ে, কর্ণফুলী হ্রদ, পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পেদা টিং টিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ, বনভান্তের জন্মস্থান, মোরঘোনায় স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতি মন্দির রাইংখ্যং পুকুর, রাজবন বিহার, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজবাড়ি, ফুরমোন পাহাড়, রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক আরো রূপময় করে তুলেছে শহরটির প্রচ্ছদ।

মনোমুগ্ধকর এই প্রচ্ছদ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। থামিয়ে দিয়েছে সব সহজিয়া সুন্দর সুর। উপজাতিদের সংস্কৃতির ঝঙ্কার নেই। নেই পেশাদার শিল্পীদের উপস্থাপনা। নেই পর্যটকনির্ভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থেমে গেছে শিল্পÑসংস্কৃতির কোলাহল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাঙ্গামাটিতে প্রায় ৫০টির অধিক সংগঠনে ৫০০ শিল্পী রয়েছেন। গত ৬ মাস ধরে করোনার হানায় যাদের জীবন থমকে গেছে। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্বের বোঝা বইতে না পেরে কেউ কেউ পেশা বদলে পান বিড়ি সিগারেটের দোকান খুলে বসেছেন। এর মধ্যে সরকারি সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। এ জন্য অনেকেরই ভাগ্যে জোটেনি এই প্রণোদনা।

জানতে চাইলে কাপ্তাই সাংস্কৃতিক একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত ভোরের কাগজকে বলেন, যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা এখন পুরোপুরি বেকার জীবনযাপন করছেন। তাদের অবস্থা ভয়াবহ। যারা টিউশনির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের কেউ কেউ এখন পেশা পরিবর্তন করে পান বিড়ি সিগারেট এবং কাপড়ের দোকান খুলেছেন। এ পরিস্থিতিতে শিল্প সংস্কৃতি এবং শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাঙ্গামাটি শহরে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে শিল্প সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জুম এসথেটিকস কাউন্সিলের সংগীত ও নৃত্য বিভাগের প্রশিক্ষক কথন চাকমা। তিনি বলেন, আমি টিউশনি করে সংসার চালাতাম। কিন্তু করোনার কারণে সব বন্ধ। ফলে এর সঙ্গে যুক্ত আমরা সবাই বেকার হয়ে গেছি। এখন খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমরা সরকারি প্রণোদনার জন্য আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু কোনো খবর নাই। তাই নিরুপায় হয়ে আমি পান বিড়ি সিগাটের দোকান শুরু করেছি। বাঁচার জন্য যুদ্ধটা শুরু করলাম।

কাপ্তাই সাংস্কৃতিক একাডেমির সাংস্কৃতিক সম্পাদক জেকলিন তনচঙ্গ্যা বলেন, কারো অর্ডার মেনে চলা সম্ভব নয় বলে চাকরি জীবনে ঢুকিনি। সংগীত শিক্ষকতাই বেছে নিয়েছিলাম। সংগীত চর্চার পাশাপাশি ৫০টি বাচ্চাকে গান শেখাতাম। তা দিয়ে সংসার ভালোই চলত। করোনার কারণে সবই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু জীবনের চাকা তো বন্ধ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে চলতি মাসে ট্রাইভাল কাপড়ের দোকান দিয়েছি। জীবনে হারতে চাই না। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।

রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি জেলা শিল্পকলা একাডেমির (অতি.) জেলা কালচারাল অফিসার অনুসিনথিয়া চাকমা ভোরের কাগজকে বলেন, রাঙ্গামাটি জেলাতে বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল। তারপরও সংস্কৃতিসেবীদের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের করোনাকালীন প্রণোদনার জন্য ১২০ জনের তালিকা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্য থেকে ৯০ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে শিল্পীদের নানাভাবে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App