×

রাজধানী

নজর দিতে হবে জনস্বাস্থ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৫ এএম

নজর দিতে হবে জনস্বাস্থ্যে

জনস্বাস্থ্য

জীবনের অধিকার ও জনস্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সংবিধান- সর্বত্রই জনস্বাস্থ্যর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু জীবনের অধিকারকে যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; জনস্বাস্থ্যকে সেই গুরুত্ব দেয়নি অনেক দেশ। অদৃশ্য করোনা ভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, জনস্বাস্থ্যের ওপর যে গুরুত্ব এবং বাজেটের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া উচিত ছিল অনেক দেশেই তা করেনি। ফলে অনেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে, এখনো খাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যে ভালো বরাদ্দ থাকলে জনমানুষ আরো ভালো চিকিৎসা পেতেন এবং বৈশ্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যের অবস্থা আরো সন্তোষজনক হতো বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কমিউনিটি পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের অধিকাংশই জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনবল নয়। আর এজন্যই হাসপাতালের বাইরে করোনা প্রতিরোধ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। দেশে কতজন জনস্বাস্থ্যকর্মী আছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। মূলত জনস্বাস্থ্যকর্মী তারাই হবেন, যাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ থাকবে। কিন্তু দেখা যায়, এখন অনেকেই নিজেকে জনস্বাস্থ্যবিদ বলে দাবি করেন। ফলে অনেক সময় সঠিক বার্তাটি সঠিকভাবে পৌঁছে না। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পরপরই বিশ^ জনস্বাস্থ্যর গুরুত্ব বেশি বুঝতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন পাবলিক

হেলথ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিএইচএবি) সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মুনীর। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, জনস্বাস্থ্যর গুরুত্ব বুঝতে হলে আমাদের ডাবি্লউএইচও স্বাস্থ্যর যে সংজ্ঞা দিয়েছে সেদিকে নজর দিতে হবে। সেখানে বলা হয়েছে, কেবল নিরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয়; বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য। শুধু চিকিৎসা দিয়ে সুস্থাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে না। কমিউনিটি লেভেলে একটি অবিচ্ছিন্ন সুন্দর স্বাস্থ্য-কাঠামো তৈরি করার পাশাপাশি দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আমাদের সংবিধানের ১৮ (১) এ বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং উন্নতি করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য। সংবিধানের এই বক্তব্যকে সামনে রেখে যদি স্বাস্থ্য খাতের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ করা যেত তাহলে হয়তো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নামও হতে পারতো ‘মিনিস্ট্রি অব পাবলিক হেলথ’। বাস্তবতা হলো; জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৪২টি অ্যালোকেশন অব বিজনেসের মধ্যে ১৪নং-এ শুধু বলা আছে ‘মেটার্স রিলেটেড অব পাবলিক হেলথ’। এছাড়া জনস্বাস্থ্য বিষয়ে আর কিছু লেখা নেই।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসাই মুখ্য। প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনাও মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো ও নীতিগতভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিত। জনস্বাস্থ্যর বিষয়টি উপেক্ষিত রেখে মহামারি প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা কিন্তু সার্বজনীন চিকিৎসাসেবা নয়, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) গুণগত চিকিৎসা দেয়ার কথা বলেছি। জনস্বাস্থ্যকে পাশকাটিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে সংক্রামক ব্যাধি কখনো শেষ হবে না। এর হুমকি সব সময় থেকে যাবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৯০ শতাংশ ভূমিকাই জনস্বাস্থ্যের।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি আমাদের দেশে উপেক্ষিত। জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষিত রেখে যে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয় এই কথাটা স্বাস্থ্য খাতের উচ্চ পর্যায়ে থাকা মানুষও বুঝতে চান না। শুধু সাধারণ মানুষই নয়; নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের অনেকের মধ্যেই জনস্বাস্থ্য বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাও নেই। দিনের পর দিন জনস্বাস্থ্য খাতকে উপেক্ষা করার ফল এখন আমরা পাচ্ছি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলামও মনে করেন, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দেয়ার খেসারত শুধু বাংলাদেশকেই নয়; বিশ্বের অনেক দেশকেই দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর স্বাস্থ্য খাতের যে চেহারা উন্মোচিত হয়েছে তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে চাই। কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফিরে যাক তা চাই না। আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। এজন্য ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এই সংস্কারের জন্য সরকারি কোনো রূপরেখা বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ড. কুদরত-ই-খুদাকে দিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। স্বাস্থ্য খাতেও তেমন একটি কমিশন গঠন করা জরুরি। এটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যও হতে পারে অথবা চলমান ভিত্তিতে থাকতে পারে। জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার এখন জরুরি।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ কতটা- এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনস্বাস্থ্য শিক্ষার যথাযথ সুযোগ এবং অবকাঠামো নেই। বেশ কিছু নামকরা হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নামমাত্র জনস্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিভাগীয় কার্যক্রম থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোরও একই অবস্থা। জনস্বাস্থ্য বিভাগ খুবই দুর্বল এবং অপেক্ষাকৃত কম মেধার জনবল নিয়ে গঠিত ও পরিচালিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App