×

সারাদেশ

রেলপথের বড় স্বপ্ন রৌমারী-চর রাজীবপুরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৪ পিএম

রেলপথের বড় স্বপ্ন রৌমারী-চর রাজীবপুরে

ট্রেন/ ফাইল ছবি

রেলপথের বড় স্বপ্ন রৌমারী-চর রাজীবপুরে

বাহাদুরাবাদঘাট দিয়ে ফেরিতে চলতো রেল

৪০ কিলোমিটার রেলপথের দাবি পূরণ হলে বদলে যাবে অর্থনীতি

দীর্ঘদিন ধরেই রৌমারী উপজেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটারে রেললাইন স্থাপনের স্বপ্ন দেখে আসছেন রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলাবাসী। বাহাদুরাবাদঘাটে ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিল রেল যোগাযোগ। নতুন করে ৪০ কিলোমিটার রেলসংযোগ সম্প্রসারণ করা হলে বদলে যাবে এ এলাকার অর্থনীতির চিত্র।

রৌমারী, রাজীবপুর, পার্শ্ববর্তী চিলমারীর কৃষিপণ্য, পাথর, বালু, বনজসম্পদসহ ভারত-বাংলাদেশ রৌমারীর স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা মালামাল পরিবহনে যুগান্তকারী সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসামের গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষের বসবাস। রেলসংযোগ সম্প্রসারণ হলে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি উন্নতি হবে লাখ লাখ মানুষের জীবন যাত্রার।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রেলের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। যা অব্যাহত রয়েছে। রৌমারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেল সম্প্রসারণ করা হলে উপজেলার হাজার হাজার মানুষের নিয়মিত রাজধানীতে যাতায়াত আরো সহজ হবে। স্বাধীনতার আগে থেকেই এখানকার বাসিন্দারা রৌমারী পর্যন্ত রেল সংযোগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জনগণের দাবি আমলে নেয়নি। স্বাধীনতার পর গেল অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও আজও দুই উপজেলায় রেল লাইন সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলা যেমন হিন্দু-মুসলিম অধ্যুষিত তেমনি রয়েছে এলসি পোর্ট ও বর্ডার হাটও। এ এলাকায় রয়েছে অসংখ্য আকর্ষণীয় চরাঞ্চল। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে এসব চরাঞ্চলে।

সম্প্রতি ঢাকা-রৌমারী সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সড়কের কাজ শেষ হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই রাস্তা দিয়ে এত পরিমাণ ওজন বহনকারী ট্রাক যাতায়াত করে যে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে অভিজ্ঞ মহল যথেষ্ট সন্ধিহান। অন্যদিকে, দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের আগমণ হবে সহজ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। প্রতিবছর সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

খাদ্যে উদ্বৃত্ত উপজেলা খ্যাত রৌমারীতে প্রতিবছর আমন ও ইরি-বোরো, গমসহ হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া রৌমারীর স্থলবন্দর ভারত হতে আসা পাথর বহুতল ভবনসহ ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে উৎকৃষ্ট কাঁচামাল। এখানকার সোনালি আঁশ অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা রৌমারী সি.জি. জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যা বর্তমানে মুক্তাঞ্চল নামে খ্যাত। একাত্তরে সাহসী নারী যোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবির বাড়িও এই অঞ্চলেই।

[caption id="attachment_243253" align="aligncenter" width="615"] বাহাদুরাবাদঘাট দিয়ে ফেরিতে চলতো রেল[/caption]

সীমান্তের অপর প্রান্তে ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশ। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষায় এলাকায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বেশ কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়িও। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান রোধে তাদের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য সরবরাহ করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ এই উপজেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক।

বর্তমান সরকার বাস্তবমুখী উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই এ অঞ্চলের সব স্তরের জনপ্রতিনিধি ও শ্রেণিপেশার মানুষের এক দাবি রৌমারী পর্যন্ত রেললাইন সংযোগ স্থাপন। ইতোমধ্যে এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজীবপুর উপজেলা রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সদস্য সচিব শিপন মাহমুদ জানান, দীর্ঘদিন থেকেই আমরা রৌমারী পর্যন্ত রেলস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি। এই অঞ্চলে রেলপথ স্থাপন হলে একদিকে কষ্ট লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি আর ব্যবসাবাণিজ্যে গতি ফিরবে।

রৌমারীর গণউন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএমএ মোমেন বলেন, রৌমারী ও রাজিবপুরে রেললাইন চালু হলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

গণউন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিষদের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, যে দেশে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই পদ্মাসেতু র্নিমাণ কাজ করতে পারে, তাদের জন্য মাত্র ৪০ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন কোনো ব্যাপারই না। আমরা প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, রেলসচিব, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।

বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন, রৌমারী থেকে ঢাকায় প্রায় ৫০টি বাস চলাচল করে। বেশি ভাড়া দিয়ে এলাকার শতশত মানুষ ঢাকায় যায়। রেললাইন চালু হলে অল্পখরচে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে এলাকাবাসী। রেল লাইনটি চালুর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App