×

সারাদেশ

চা বাগানে রাবারের বিকল্প কফি চাষে সাফল্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২১ এএম

চা বাগানে রাবারের বিকল্প কফি চাষে সাফল্য

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের পতিত জায়গায় কপি চাষ করা হচ্ছে -ভোরের কাগজ

সরকারিভাবে রাবার চাষের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চা বাগানের পতিত জায়গায় পরীক্ষামূলক অ্যারাবিক জাতের কফি গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। উপযোগী মাটি, আবহাওয়া ও উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় পাহাড়ি অঞ্চলে কফি চাষ সম্প্রসারণে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে বেশ কিছু চারা আগ্রহী চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। উৎপাদিত কফির প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সহজ হলে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে কফি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে এই অঞ্চলে।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের পতিত জায়গায় ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে বাগানে কফি চাষ করা হয়। এতে চা বাগানের সেকশনের খালি জায়গা ও বাংলোর সড়কের পাশে মোট ৪০ একর জায়গায় ১০ হাজার কফি গাছের চারা লাগানো হয়। কফি চাষের উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় পরিপক্ব কফি গাছে এখন ফলের সমারোহ। কফি গাছ একবার লাগালে দ্বিতীয়বার আর কোনো কাজ থাকে না। এতে সব দিক দিয়ে লাভবান হওয়া যায় সহজে। বিশ্বের বাজারে কফির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, দামও অনেক। তাই চা বাগানের পতিত জায়গায় কম খরচে অধিক লাভের আশায় কফি চাষের দিকে ঝুঁকছেনচা বাগানসংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা বাগানগুলোতে রাবার উৎপাদনের আর সুযোগ থাকবে না। চায়ের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ রাবারের বিকল্প হতে পারে। কম খরচে কফি চাষে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। যে মাটিতে অ¤øমাত্রা বা ক্ষারত্ব আছে সে মাটিই কফি চাষের উপযোগী।

মাথিউড়া চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার ইবাদুল হক বলেন, বাগানের টিলাগুলোর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে চা আবাদ করা যায় না। এসব জায়গায় রাবার চাষ হতো। রাবার চাষে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জমির সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে বিকল্প চাষ হিসেবে কফি চাষ করা যেতে পারে এই পতিত জায়গায়। তিনি আরো বলেন, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কফির চারা লাগিয়েছি। আমাদের চা বাগানের মালিক শামসুদ্দীন খানের স্বপ্ন ছিল চায়ের পাশাপাশি কফি বাগান তৈরি করা। এখন চা বাগানে নতুন করে রাবার চাষের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চা বাগানগুলো আর নতুন করে রাবার চাষ করতে পারবে না। এখন রাবার চাষ আগের মতো লাভজনকও নয়। তাই আমরা রাবার ফেলে দিয়ে কফি লাগাব।

শুধু চায়ের ওপর নির্ভর করা যাবে না। এমনিতেই করোনাসহ নানা সংকটের কারণে চায়ের দাম কমছে। এই সংকট কাটতে বছর দুই লাগতে পারে। তাই আমরা বিকল্প ফসল হিসেবে কফিকে বেছে নিয়েছি। এতে চা বাগান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হবে। বাংলাদেশি এবং বিদেশি উভয় বাজারেই কাঁচা কফির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাজারে এবং তরুণদের মধ্যে কফির চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে নারীদের বেশি পছন্দনীয়। নতুন প্ল্যানটেশনে কপি চাষ অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আশা জাগাবে। উৎপাদিত কফির প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সহজ করার দাবি জানান তিনি।

চা বাগানের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. বিলাল উদ্দিন বলেন, আমরা এককভাবে চা চাষের উপর নির্ভর করতে পারি না। করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে চায়ের দাম দ্রæত হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং চা বাগানের জমির সুস্থ ব্যবহারের জন্য কফি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই বিকল্প হতে পারে। চা শ্রমিকরাই কফি চাষে পরিচর্যা করতে পারে। এর জন্য আলাদা শ্রমিক নিয়োগের দরকার হয় না। বাজারে কফির একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। তবে দুর্ভাগ্য যে, কফি প্রসেসিং ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।

বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন যাচ্ছেন মাথিউড়া চা বাগানে কফি চাষ দেখতে। এমনই একজন জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, কৃষি বিভাগের অগ্রগতিতে জেলায় কফি চাষ নতুন সংযোজন। এ অঞ্চলে আগেই কফি চাষ করার প্রয়োজন ছিল। পরীক্ষামূলক চাষে কফির যে ফলন হয়েছে তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে কফি এই অঞ্চলের আরেকটা সম্ভাবনার দিগন্ত হবে।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, এই অঞ্চলে নতুন করে কফি চাষ হয়েছে শুনে দেখতে এলাম। গাছগুলো দেখে বেশ সতেজ মনে হয়েছে এবং প্রায় সব গাছেই কম-বেশি কফি ধরেছে। তিনি কফির অনেক ওষধি গুণাগুণ বয়েছে উল্লেখ করে আরো বলেন, দেশে ব্যাপক কফি চাষ হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজি লুৎফুল বারী জানান, মাথিউরা চা বাগানের কফি চাষের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে এই অঞ্চলের মাটিতে পর্যাপ্ত অম্লমাত্রা থাকায় পাহাড় টিলা ভ‚মিতে কফি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জেলার উপযুক্ত ভ‚মিতে কফি চাষের জন্য আগ্রহী কৃষকদের উৎসাহিত করব। এ অঞ্চলে কফি সম্প্রসারণে কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কৃষি বিভাগও কাজ করছে। এরই মধ্যে কৃষি বিভাগ অ্যারাবিক জাতের বেশ কিছু কফি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দামি ও জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে কফি। সব বয়সি মানুষের কাছে রয়েছে এর কদর। সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়া ও রাবার চাষে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় চা বাগানে চায়ের পাশাপাশি রাবারের বিকল্প হিসেবে চাষ হচ্ছে কফি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App