×

জাতীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক শত কোটি টাকার মালিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:০৩ পিএম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক শত কোটি টাকার মালিক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক আবদুল মালেক/ ছবি: সংগৃহীত

আবদুল মালেক ওরফে বাদল পেশায় একজন গাড়িচালক। চাকরি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উঠে আসে তার অবৈধ অঢেল সম্পত্তির চিত্র। তার অবৈধ সম্পত্তির মাধ্যে ঢাকায় দুটি সাততলা ভবন, নির্মাণাধীন একটি দশ তলা ভবন, জমি, গরুর খামার ইত্যাদির সন্ধ্যান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব। যদিও ইতিমধ্যে আব্দুল মালেক ওরফে মালেক ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার শত কোটি টাকার সম্পদেরও সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অষ্টম শ্রেণি পাস আবদুল মালেক ১৯৮২ সালে প্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। বছর চারেক পর অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

আবদুল মালেক ওরফে বাদল কত সম্পদের মালিক জানতে চাইলে র‍্যাব সূত্রগুলো বলছে, তাঁর (আবদুল মালেক) স্ত্রী দুজন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ এলাকার দক্ষিণ বামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তরপাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাত তলার দুটো আবাসিক ভবন আছে। নাম হাজী কমপ্লেক্স। এতে ফ্ল্যাট সংখ্যা ২৪টি। ওই ভবনের সামনে আছে ১০-১২ কাঠার আরেকটি প্লট। ভবনের তৃতীয় তলায় তিনি সপরিবারে থাকেন। বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া আছে। বড় মেয়ে ‘বেবি’র নামে দক্ষিণ কামারপাড়ার ৭০ রাজাবাড়ি হোল্ডিং এ ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ইমন ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর ফার্ম আছে। এতে ৫০টি বাছুরসহ গাভি আছে। এর বাইরে ২৩, ফ্রি স্কুল রোড, হাতিরপুলে পৈতৃক সাড়ে চার কাঠা জায়গার ওপর দশতলা নির্মাণাধীন ভবন আছে। ভাই আবদুল খালেকের সঙ্গে বিরোধের কারণে ভবনটির নির্মাণকাজ আদালতের নির্দেশে বন্ধ আছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন। এই পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভারদের ওপর একছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে বিভিন্ন ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন।

জানা গেছে, ড্রাইভার মালেক তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী পদে, ভাই আব্দুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আব্দুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার পদে, নিকট আত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চাকরি দিয়েছেন।

মালেক নিজে গাড়িচালক হলেও মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি (গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো গ- ১৩-২৯৭৯ ) নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত পাজেরো গাড়ি ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। এরমধ্যে একটি পিকআপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-৭০০১) তিনি নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রি এবং মেয়ের জামাইয়ের পরিচালিত ক্যান্টিনের মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করতেন। অপর একটি মাইক্রোবাস ( গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো চ- ৫৩-৬৭৪১ ) স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করতেন।

আবদুল মালেকের মেয়ে নাজনীন সুলতানা বলেন, র‍্যাব-পুলিশ মিথ্যা কথা বলছে। তাঁদের ভবন দুটি নয়, একটি। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদোন্নতির পর নতুন একটি গাড়ি ব্যবহার করায়, পুরোনোটি তাঁর বাবা মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে আসতেন। নিয়মিত ব্যবহার করতেন না। সবাই মিথ্যা কথা বলছে। তাঁদের সম্পদ বিবরণী দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App