×

সারাদেশ

সে রাতে কী ঘটেছিল হাটহাজারী মাদ্রাসায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৪ এএম

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় টানা ২ দিনের বিক্ষোভ এবং আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফী। গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠকে তিনি মহাপরিচালকের পদ ত্যাগ করেন। একই সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করেন তার ছেলে আনাস মাদানীকে। এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন আহমেদ শফী। শূরা কমিটির বৈঠক থেকে তাকে সরাসরি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার বিকালে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আহমেদ শফী। তার মৃত্যুর পরই অসুস্থতা এবং হাটহাজারী মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই রাতে কী ঘটেছিল মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠকে? কেনই বা অসুস্থ আহমেদ শফীকে দীর্ঘ সময় শূরা কমিটির বৈঠকে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে? কেন তাকে পদত্যাগ করতে হলো? হঠাৎ করে কেন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।

সূত্র জানায়, অসুস্থতার কারণে হেফাজতে ইসলাম এবং মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনে ছেলে আনাস মাদানীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন আহমেদ শফী। এই সুযোগে আনাস মাদানী তার ইচ্ছেমতো অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন। এতে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হন হেফাজতে ইসলাম এবং মাদ্রাসার পরিচালকদের একাংশ। এরই মধ্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকেই মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। জুনায়েদ বাবুনগরীকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামী। যার ফলশ্রুতিতে গত বুধবার ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে টানা ৩৭ ঘণ্টা একপ্রকার অবরুদ্ধ ছিলেন শতবর্ষী আহমেদ শফী। কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং পরিস্থিতির চাপে তিনি ‘হার্টফেল’ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সম্প্রতি মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক আনাস মাদানী।

হাটহাজারী মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে ‘শফী হুজুর গ্রুপ’ বনাম ‘বাবুনগরী গ্রুপ’র মধ্যকার বিরোধের জেরে মাদ্রাসার ভেতরে ভাঙচুর ও বিক্ষোভকারীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে ছিল আহমেদ শফীর অব্যাহতির বিষয়টিও। বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের মুখে একপ্রকার বাধ্য হয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আহমেদ শফী।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর ছেলে আনাস মাদানী তার বাবার জানাজা ও দাফনের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। মাদানী একপর্যায়ে বলেন, ‘আমার আব্বা দীর্ঘদিন রোগে ভুগলেও ভালোর দিকে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা আমাকে জানান, আব্বা টেনশনের কারণে হার্টফেল করেছিলেন। সে জন্যই আজ এ অবস্থা।’ হাটহাজারীর ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

এদিকে, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের একাধিক নেতা জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে আহমেদ শফী বেশ অসুস্থ ছিলেন। এরই মধ্যে মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত ও ৩৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন তিনি। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠকে নিজের অব্যাহতির পাশাপাশি ছেলে আনাস মাদানীকেও স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আহমেদ শফী। এরপর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। এরপর থেকে ওনার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মধ্যরাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় শুক্রবার বিকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে মারা যান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App