×

জাতীয়

সবার আগ্রহ কমিটিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪৮ এএম

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সুযোগ থাকছে না হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীদের

দীর্ঘদিন পর তৃণমূলে নিয়মিত সম্মেলনের আবহ শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ অথবা স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি শেষে দীর্ঘদিন দলীয় পদপদবির পরিচয় ছাড়াই ঘুরছেন, তাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পেতে যাচ্ছেন অনেকেই। এবার আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৩১টি জেলা ও মহানগরীর সম্মেলন এবং আংশিক কমিটি হয়েছে। কিছু কিছু জেলায় শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি কোনো ইউনিট। এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে দলটি। এরইমধ্যে ৩১টি জেলা ইউনিটের বেশিরভাগই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দলীয় সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে জমা হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। তিনি বলেন, বেশিরভাগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা হয়েছে। দুয়েকটি জেলা বাদ আছে। তাদের ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জানা গেছে, এবারের কমিটিগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ঠাঁই পেতে পারেন। কোনো সুবিধাবাদী ও হাইব্রিড নেতা কমিটিতে ঠাঁই পাবে না। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। যাদের প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন জাতীয় রাজনীতিতে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগেও এবার খসড়া কমিটিতে ছাত্রনেতারা প্রাধান্য পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া জমা দেয়া বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটিতেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতা ও ক্লিন ইমেজের নেতারা ঠাঁই পেয়েছেন। কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগেও যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী ঠাঁই না পায়, সেজন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যাচাইবাছাই করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সবার আগ্রহ এখন মূল দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে। কারণ জমা দেয়া কমিটিতে কার কার ভাগ্য খুলছে, তা সবার অজানা। অনেকেই জেলা ও মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ ও নিজের অতীত রাজনীতির উজ্জ্বল ইতিহাস মনে করে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার আশা করছেন।

তবে এসব ইউনিটের কমিটি জমা হলেও সহসাই কেন্দ্র থেকে তা অনুমোদন পাচ্ছে না বলে সাফ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল তিনি বলেন, উপজেলা, জেলা, মহানগরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের যেসব কমিটির তালিকা ইতোমধ্যে জমা হয়েছে সেগুলোর নাম এখনই ঘোষণা করা হবে না। যাচাইবাছাই করে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নাম তালিকায় আছে কিনা তা দেখা হবে। স্বজনপ্রীতি ও নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি দেয়া হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। মোট কথা দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা যাতে মূল্যায়িত হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে। অবিতর্কিত ও ত্যাগীদের কমিটিতে অবশ্যই অগ্রাধিকার থাকবে। বিতর্কিতদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।

এর আগে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের যে কোনো কমিটিতে ত্যাগীরা যেন কোনোভাবেই বাদ না যায় এবং অনুপ্রেবেশকারী ও হাইব্রিডদের ঠাঁই না হয়, সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য প্রতিটি বিভাগে সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি শুধু নিজের অনুসারী ও পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করবে, আর সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাদ দেবে- এরকম যেন না হয়। প্রয়োজনে ওই জেলার কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন সম্মেলন আয়োজনেরও নির্দেশ দেন তিনি।

দলীয় প্রধানের কঠোর এই ঘোষণার পর অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছে দীর্ঘদিন কোনো পদপদবি না পাওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা বলছেন, পার্টির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটুক- এটা আমরা চাই। শুধু জেলা, মহানগর ও উপজেলা এবং সহযোগী সংগঠনেই নয়। আওয়ামী লীগের উপকমিটিগুলোতেও যেন ত্যাগী, পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জায়গা পায়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে পারেন ছাত্রলীগের সাবেক এমন একজন নেতা ভোরের কাগজকে জানান, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর করোনা ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। গত সপ্তাহে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। শুনেছি কমিটিতে আমাকে একটি পদে রাখা হয়েছে। আমরা এখন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি, কখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সহসাই কমিটি অনুমোদন হবে না। যাচাইবাছাই করে তারপর অনুমোদন হবে। আমরাও চাই, কমিটিতে ত্যাগী ও পরিশ্রমীদের ঠাঁই দেয়া হোক। কোনো হাইব্রিড যেন ঠাঁই না পায়। তবে এই ছাত্রনেতার আশা দ্রুতই যাচাইবাছাই শেষ করে কমিটি অনুমোদন হবে। একই অবস্থা বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনেও পদ-প্রত্যাশীদের মধ্যে। তাদের চাওয়া- অপেক্ষার অবসান হোক, দ্রুত কমিটি ঘোষণা হোক।

ঠিক কোনো প্রক্রিয়ায় কমিটি যাচাইবাছাই করা হবে, সে বিষয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের তেমন ধারণা নেই। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, সারাদেশে ৮টি বা তার বেশি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে। সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যের নেতৃত্বে ১ জন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদমণ্ডলীর একজন ও কার্যনির্বাহী সংসদের একজন সদস্য এসব টিমে থাকবেন। এই টিম জেলা, মহানগর কমিটি ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা চুলচেরা যাচাইবাছাই করবে। প্রত্যেকের অতীত রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। দলে কার কী ত্যাগ ও অবদান আছে, সেগুলো দেখা হবে। আগে কোনো কমিটিতে ছিল কিনা সেটাও খোঁজ নেয়া হবে। যদি দুর্দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কাউকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে কোনো ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ বাদ দেন, তাদের বাদ দেয়ার কারণ জানতে চাওয়ার পাশাপাশি কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে। মোট কথা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কমিটি গঠনে যে নির্দেশনা দিয়েছেন- আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, যেসব জেলা ও মহানগর কমিটি জমা হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা এখনো কমিটি জমা দেননি, তাদের কমিটি জমা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোনো বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড ঠাঁই পাবে না। একইভাবে উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোতেও যাতে এরা ঠাঁই না পায়, সেটা জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে। এরপরও কোনো কমিটি বা কোনো ব্যক্তি নিয়ে যদি বিতর্ক দেখা দেয়, বা আমরা অভিযোগ পাই, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App