×

সারাদেশ

গণমাধ্যমে কথা বলায় উপজাতি নারীর নামে মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৯ পিএম

যৌন নির্যাতন ও মানসিক হয়রানির শিকার হয়ে গণমাধ্যমে মুখ খোলায় এবার বান্দরবানের সেই উপজাতি নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সুজন বড়ুয়া। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান’র আদালতে সুজন বড়ুয়া মানহানির অভিযোগ এনে এই মামলা দায়ের করেন।

তথ্য গোপন ও স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতিসহ একই সংস্থায় দু’চাকরি নেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় একই মামলায় মো. হারুন রশিদ নামে এক স্বাস্থ্য সহকারীকেও আসামি করে সুজন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম জজ কোটের নারী আইনজীবী ও মানবাধিকার নেত্রী রওশন আরা ঝরণা এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

এডভোকেট রওশন আরা ঝরণা বলেন, বান্দরবান জেলার অতীত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ‘সুজন বড়ুয়া'র বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় সুজনকে অভিযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। তবে সুজন অলৌকিক স্ট্যান্ড রিলিজে বান্দরবান থেকে ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাড়ি দেয়ায় এই যৌন নির্যাতন মামলা ধামাচাপা পড়ে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সংস্থাটি এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় যৌন নির্যাতন ও মানসিক হয়রানির শিকার নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুখ খোলেন। এর পরই সুজন বড়ুয়া আদলতে তড়িগড়ি করে একটি মামলা দিয়েছেন ভিকটিমের বিরুদ্ধে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এডভোকেট রওশন আরা ঝরণা বলেন, সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে বান্দরবানে স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে র্দুনীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রাঙামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যেও একের পর এক রহস্যজনক পদোন্নতি নিয়েছেন সুজন। সর্বশেষ পদায়নে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক।

এই বিজ্ঞ নারী আইনজীবী বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় সুজন বড়ুয়ার জাল জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে কোনো সংস্থা তদন্ত করছে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পিবিআই, রাঙামাটি, বান্দরবান ও ফেনীর সিভিল সার্জন এর তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুজনের স্থায়ী নাগরিকত্ব সনদ প্রদান প্রসঙ্গে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ বান্দরবানের ডিসিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সবগুলোতেই অসঙ্গতি রয়েছে।

তিনি বলেন, সুজন বড়ুয়া ২০১২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অধীনে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন। এরপর ২০১৪ সালে সুজন বড়ুয়ার নিজ নামে নাইক্ষ্যংছড়িতে ক্রয়সূত্রে জমি রেজিস্ট্রি হয়। যদিও চাকরি গ্রহণ এবং তৎপূর্ব স্থানীয় নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণকালীন পার্বত্য বিধি অনুযায়ী (হীলটেক্স ম্যানুয়েল) সুজনের বাবা, মা, দাদা, দাদি, নানা ও নানি কারো নামেই রেকর্ডকৃতর ভূমির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পূর্বানুমতিও থাকার প্রমাণ নেই। সুতরাং সে সময় পাহাড়ের বাসিন্দার অনুকূলে নেওয়া সুজন বড়ুয়ার সকল সনদ ও দলিলপত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাথে প্রতারণার মাধ্যমেই সংগৃহীত। আদালতের নিকট এসব তথ্য তুলে ধরা হবে।

উল্লেখ্য: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির স্থায়ী ঠিকানা জালিয়াতি করে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন কক্সবাজারের উখিয়ার হলিদিয়া পালংয়ের বাসিন্দা সুজন বড়ুয়া। এরপর একের-পর এক রহস্যজনক পদোন্নতি নিয়ে হয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত ‘জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর’ (ডিএসআই) থেকে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক (ডিএইচএস) পদে পদোন্নতির তালিকায় ঠাঁই হয়নি সুজনের। চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি এসব অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে আসে। তবে এই বিষয়ে মুখ খোলতে নারাজ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্যসহ সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App