×

সাহিত্য

কক্সবাজারের সংস্কৃতিকর্মীদের প্রণোদনা বাড়ানোর আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৩৪ এএম

কক্সবাজারের সংস্কৃতিকর্মীদের প্রণোদনা বাড়ানোর আহ্বান

কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ওশান ফেস্টিভ্যাল। ফাইল ছবি।

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। এর বুকজুড়ে সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। নীল জলরাশি আর শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত। অপরূপ সুন্দর এই শহরের চতুর্পাশ ঘিরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি, শাহপরী, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারকে করেছে আরো আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কুহেলিয়া ও নাফ নদী। পর্যটন, বনজসম্পদ, মৎস্য, শুঁটকি মাছ, শামুক, ঝিনুক ও সিলিকাসমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজারের অবস্থান তাই ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের কাছে সবার উপরে। সমুদ্র তীরবর্তী শহর হিসেবে কক্সবাজারের সংস্কৃতি মিশ্র প্রকৃতির। পূর্ব থেকেই বার্মার সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সম্পর্ক থাকায় এবং রাখাইন জনগোষ্ঠী বসবাস করায় কক্সবাজারে রয়েছে বাঙালি এবং বার্মিজ সংস্কৃতির এক অভ‚তপূর্ব সমন্বয়। বিশেষকরে রাখাইন সংগীত এবং নৃত্যকলা এ অঞ্চল তো বটেই বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল হতেই দুর্যোগ এবং উত্তাল সাগরের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে রয়েছে বিধায় স্থানীয় সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যম ও উপস্থাপনায় সংগ্রামের সেই চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু করোনার কারণে এই পর্যটন শহরের সংস্কৃতিসেবীদের জীবন যেন থমকে গেছে। সাগরপাড়ে এখন আর বয়ে যায় না সংস্কৃতির স্নিগ্ধ স্রোতধারা। যে স্রোতধারায় ঢেউয়ের শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে মিশে যায় না সুর মূর্ছনা। নাচের নান্দনিকতায় আলোড়িত হয় না বিশাল বালিয়াড়ি। অসীম আকাশে ওড়াউড়ি করে না রঙিন ঘুড়ি। সেখানে এখন শুধুই হাহাকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা সীমাবদ্ধতা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আর্থিক দৈন্যতা, মহড়া কক্ষের সংকট, মিলনায়তন সংকটে কোনো রকমে সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনার সমস্যাসহ ক্রমশ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত। এত সংকটের মধ্যেও পর্যটন শহরটির সংস্কৃতিকর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও করোনায় সব কর্মকাণ্ড ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় অনেকে হতাশার গর্তে পড়ে আছে!

সূত্র মতে, কক্সবাজারে সংস্কৃতিসেবীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের অধিক। যাদের অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ সরকারি প্রণোদনা পেলেও অনেকেরই দরজায় এ আশীর্বাদ পৌঁছেনি! অথচ এই করোনা সংকটে সরকারি প্রণোদনা হতাশার গর্তে পড়ে যাওয়া সংস্কৃতিকর্মীদের আশার আলো দেখাতে পারত।

জানতে চাইলে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে পেশাজীবী সংস্কৃতিকর্মীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় সহায়তা দেয়া হয়েছে, তবে তা বিক্ষিপ্তভাবে। এসব সংস্কৃতিকর্মীদের সরকারি প্রণোদনা দেয়া হলেও, অজ্ঞাত কারণে অনেকে তা পায়নি। যদিও তাদের পাওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। অথচ তাদের তালিকাও পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। এই বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না। এরকম বৈষম্য হলে সংস্কৃতিকর্মীদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

কক্সবাজার জেলা খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ জানান, কক্সবাজারে দুই ধরনের সাংস্কৃতিককর্মী আছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে ব্যান্ড এসোসিয়েশন, যাদের ঘিরে পর্যটনকেন্দ্রিক একটা বলয় তৈরি হয়েছে এবং রয়েছে মূল ধারার প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংস্কৃতিসেবীদের পাশাপাশি পর্যটনশিল্প বন্ধ থাকায় দুই পেশাজীবীদের পরিস্থিতিই ভয়াবহ। সবই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কোনো শিল্পী এবং শিল্পকেই টিকিয়ে রাখা যাবে না।

কক্সবাজারের মেধাবী কবি মানিক বৈরাগী। যিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। অসুস্থতা নিয়ে টিউশনি করে জীবনযাপন করছেন। কষ্টসহিষ্ণু এই কবি বলেন, এখনো করোনা আক্রমণ করার সাহস পায়নি। তবে টিউশনি কোচিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অর্থকষ্টে আছি। আমার সাত মাসের বাসা ভাড়া বাকি হয়ে গেছে। বর্তমানে মেয়রের জিম্মায় বাসায় আছি।

কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন জানান, আমরা ভার্চুয়াল প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া করোনার ধাক্কায় নাজেহাল যারা, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে এখনো। এসব সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে আমরা যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো সংস্কৃতিকর্মী তারা কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু যারা সংস্কৃতিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তাদের পরিস্থিতি খারাপ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App