বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের রাশ টানার তাগিদ

আগের সংবাদ

বয়স্ক পুরুষরাই টার্গেট লাস্যময়ী জান্নাতের

পরের সংবাদ

সিলেট জেলা

প্রণোদনা থেকে বাদ পড়ছেন প্রকৃত শিল্পীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ , ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ , ১২:৩১ অপরাহ্ণ

জেলা ভিত্তিক স্থবির সাংস্কৃতি কর্মকাণ্ড-৭

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির শহর সিলেট। প্রকৃতি যেন এখানে তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে! এখানে ভাঁজ হয়ে শুয়ে পাহাড় আর এর চারপাশজুড়ে ঘন সবুজের বন মন মাতাল করে দেয়! হাতছানি দিয়ে ডাকে সৌন্দর্যপিয়াসীদের। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব যেন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পঞ্চাশ ষাটের দশকে প্রবাসী সিলেটিদের কল্যাণে শহরটির দ্রæত নগরায়ণও ঘটতে থাকে। এই নগরায়ণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে যারপরও নাই। ইতিহাসবিদদের ধারণা, প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু সংস্কৃতি যুগপৎভাবে সিলেট অঞ্চলের সংস্কৃতির ভীত রচনা করেছে। বনজ, খনিজ ও মৎস্যসম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী ও বিশ্বের দ্বিতীয় লন্ডন হিসেবে খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলংয়ের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, পাথরের বিছানাখ্যাত বিছনাকান্দি, রাতারগুল জলাবন পর্যটকদের টেনে আনে বারবার।

আর শিল্প সাহিত্য সংগীতে মুখর সিলেটের সংস্কৃতি বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছে সারাদেশকে। এর গাটু গান, সারি গান, মরমি গান, বাউল, যাত্রা, মালজোড়া, বিয়ার, হাছন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, দুরবীনশাহের গানের এ শহরেও করোনার হানায় শিল্পীরা যেন বিব্রত, লজ্জায় ম্রিয়মাণ।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, সিলেটে নাট্যশিল্পী থেকে শুরু করে সংগীত, নৃত্য, মরমি, যাত্রা, বাউল শিল্পীসহ সংস্কৃতিসেবীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের মতো। যাদের অনেকেই করোনার ছোবলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি প্রণোদনা পেলেও তা একেবারেই অপ্রতুল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয়ভাবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা প্রকৃত দুঃস্থ শিল্পীদের তালিকা দিলেও সে তালিকা ঢাকায় এসে বদলে গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে সরকারি প্রণোদনা থেকে বাদ পড়ে গেছেন দীর্ঘ বছর ধরে শিল্পে নিবেদিতপ্রাণ অনেক সংস্কৃতিজন।

জানতে চাইলে, সিলেট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী ভোরের কাগজকে বলেন, সিলেটের অনেক শিল্পী মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারপরও লজ্জায় কারো কাছে বলতে পারেনি। বরং কেউ কেউ বলেছে, সহযোগিতা দিতে চাইলে আমার বাড়িতে দিনে নয়, রাতের বেলায় আসবেন। সরকার ৫০ জন শিল্পীকে ৫ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দিয়েছে। এই ৭ মাসের সংকটকালে এই টাকায় কি হয়?

তিনি বলেন, শিল্পকলায় শিল্পপতিরা আসবে নাকি শিল্পীরা আসবে? যদি শিল্পীরাই আসবে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে আমাদের চাওয়া শিল্পীদের পাশে দাঁড়ান। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে যাচাইবাছাই করে প্রকৃত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ান।

সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বললেন, সংগীতে পেশাদারিত্ব আছে, কিন্তু নাটককে পেশাদারিত্বের জায়গায় নিতে পারিনি আমরা। আমরা নাট্যকর্মীরা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যুক্ত লাইট, মিউজিক, মেকআপের সঙ্গে যুক্ত ব্যাক স্টেজের কর্মীদের অবস্থা শোচনীয়। মার্চ থেকে আগস্ট মঞ্চে কোনো আলো জ¦লেনি। সেই সঙ্গে অনেকেরই চুলায়ও আলো জ্বলেনি! আমরা সাংগঠনিকভাবে ৮ হাজার পরিবারকে কলের গাড়ির মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছি। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা জরুরি। সাহস এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ৩ যুগপূর্তি উৎসবের আয়োজনও করছেন বলে জানান এই নাট্যজন।

শুদ্ধ সংগীত পরিষদের সংগঠক কল্লোল তালুকদার বলেন, করোনা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কেবল শিল্পী নন, যন্ত্রী থেকে করে শিক্ষকরাও বেকার হয়ে গেছেন। যারা সংগীতকে শিক্ষকতা পেশা হিসেবে নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, যারা শিল্পকে উপজীব্য করে জীবনযাপন করছে, এই সংকটে কর্মক্ষেত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছেন তাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯০ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। যদিও সংস্কৃতিজনদের পক্ষ থেকে ৮১৫ জনের একটি দুঃস্থ শিল্পীর তালিকা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ শিল্পীকে সহায়তা দেয়া হয়েছিল।

ডিসি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়