×

জাতীয়

ডেইলি স্টারের সম্পাদক গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:৪২ পিএম

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ‘গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মাহফুজ আনামের লেখা একটি প্রবন্ধে ২১ অগাস্ট ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাহফুজ আনামদের সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠতার জন্য মুখোশ কি না, সেটি এখন জনমনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। মাহফুজ আনাম তার ফরমায়েশি, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একদেশদর্শী প্রবন্ধে ২১ অগাস্ট ও দেশনেত্রীকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে ডেইলি স্টারে ‘আফটার থার্টি ইয়ার্স অব অটোক্রেসিস ডিমাইস, ডেমোক্রেসি স্টিল রিমেইনস এ ডিস্ট্যান্ট ড্রিম’ শিরোনামে মাহফুজ আনামের ওই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে ‘খালেদা জিয়ার সরাসরি সম্পৃক্ততা নিয়ে যাদের সন্দেহ’ ছিল, ওই ঘটনার পর তখনকার বিএনপি সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে তারাও নিজেদের ‘প্রতারিত বলে মনে করেছেন’। ওই হামলার একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করার কোনো চেষ্টাই তখনকার সরকার করেনি’, যা হামলার পেছনে ‘সরকারের সম্পৃক্ততার সন্দেহকে’ আরও জোরালো করেছে।

মাহফজু আনাম লিখেছেন, তখনকার বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পার্লামেন্টে যেসব বক্তব্য এসেছে, তা ‘কেবল সত্যের অপলাপ নয়’ তাতে সাধারণ মানুষের বোধবুদ্ধির প্রতি ‘অবজ্ঞাও’ দেখানো হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জজ মিয়া নাটকের ‘লজ্জাজনক ঘটনা’ এবং ‘লোকদেখানো’ বিচারিক তদন্তের ঘটনাও হয়েছে। নিবন্ধের ওই বক্তব্যকে ‘নির্জলা মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসংলগ্ন’ মতামত বলে আখ্যায়িত করেছেন রিজভী।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মাহফুজ আানমের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব মাহফুজ আনাম মুখে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করলেও তিনি আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু, ফ্যাসিবাদের তল্পীবাহক। শেকসপিয়রের একটি লাইন মনে পড়ে যায়- ‘দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ’… স্বর্গে কী ঘটে বলতে পারব না, তবে পৃথিবীতে বিচিত্র ও বহুরূপী মানুষরা নানা ঘটনার সাথে যে যুক্ত থাকে, মাহফুজ আনাম সাহেবেরা তার প্রমাণ।

ওই লেখার সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি (মাহফুজ আনাম) ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন, যা হলুদ সাংবাদিকতা এবং বর্তমান মিডনাইট সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য। মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বার বার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। তার লেখালেখির ভিশন-মিশন হল বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করে তা প্রকাশ করা। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগের ইচ্ছায় হোক, গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী সরকারকে খুশি করাই এখন তার আরাধ্য। মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন।

মাহফুজ আনাম তার বাবা বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্তিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয় আবুল মনসুর আহমদের নাম ভূলণ্ঠিত করছেন” বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, মাহফুজ আনামদের সারথী হয়ে তথাকথিত সুশীল শ্রেণীর বেশ কয়েকজন এদেশে গণতন্ত্র হত্যা করে এক-এগারোর অসাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। স্বচ্ছ সাংবাদিকতা নয়, বিদেশি অর্থদাতা প্রভু ও দেশীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানে মাহফুজ আনামদের ভূমিকা ও অপতৎপরতা কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে।

২০০১ সালের পরে ‘মাহফুজ আনামদের নেতৃত্বেই’ নানা ইস্যু বানিয়ে ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পালে হাওয়া’ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, “২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সেদিন তিনি উল্লাস করেছিলেন।

এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেন-‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’। ডেইলি স্টার গ্রুপের পত্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। ‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ বাস্তবয়নে সে সময় দেশের রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তারের ‘পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে’ ডেইলি স্টার সম্পাদক ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন’ বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, মাহফুজ আনামদের চোখে সব দোষ রাজনীতিকদের, রাজনীতিবিদরা সবাই যেন চাঁদাবাজ-চোর। তারাই কেবল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ এনে ডেইলি স্টার পত্রিকায় তালিকাও ছাপা হয়েছিল। জেলে ঢোকানো হয়েছিল দেড় শতাধিক নেতাকে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ ‘জল্লাদের রঙ্গমঞ্চে’ পরিণত হয়েছে ম্তব্য করে রিজভী বলেন, “মাহফুজ সাহেবরা এখন নতুন করে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে জাতিকে গণতন্ত্রের জ্ঞান বিতরণ করছেন। তার (মাহফুজ আনাম) নিবন্ধ গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না এবং হলুদ সাংবাদিকতার নতুন সংযোজন বলে আমরা মনে করি। মনে রাখতে হবে, শকুন যখন কাঁদে, তখন গরুর জন্যই কাঁদে, প্রাণীকুলের কোনো করুণ ট্র্যাজেডির জন্য কাঁদে না। ২০১৬ সালে টেলিভিশনে এক আলোচনায় ‘সূত্রবিহীন খবর প্রকাশের জন্য’ মাহফুজ আনামের ‘ক্ষমা চাওয়ার’ কথাও তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্র নেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিবর, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আসাদুল করিম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App