×

সাহিত্য

‘কার বা কাছে বলি ভাত রুটির কথা!’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:৪০ পিএম

‘কার বা কাছে বলি ভাত রুটির কথা!’
‘কার বা কাছে বলি ভাত রুটির কথা!’

ইন সার্চ অব রিয়েলিটি : ট্রিবিউট টু লালন প্রযোজনা -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

 
ময়মনসিংহ গীতিকা আর ব্রহ্মপুত্র নদী পাড়ের শহর ময়মনসিংহের প্রধান পরিচয় সংস্কৃতির নগরী হিসেবে। মহুয়া-মলুয়া আর চন্দ্রাবতী রাতের প্রচ্ছদপট যেন ময়মনসিংহ। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ জেলার পরিচিতির ক্ষেত্রে বড় একটা জায়গা দখল করে আছে গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তবে অধুনা নানা সীমাবদ্ধতা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আর্থিক দৈন্য, নিবেদিত প্রাণ সংগঠকের অভাবের কারণে সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অতীতের তুলনায় ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। তবুও ময়মনসিংহ শহরে গান-নৃত্য-নাটক ও আবৃত্তি চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা। বর্তমানে করোনার হানায় গত ৬ মাস ধরে ময়মনসিংহ গীতিকার শহরটির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি খেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করছে, অনেকে এর তার কাছে হাত পেতে চলছে, একটু মধ্যবিত্ত শ্রেণির যারা তারা বাসা ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পেরে গ্রামে চলে গেছেন। অথচ সরকারের দেয়া প্রণোদনা সিন্ডিকেটবাজ সাংস্কৃতিক মোড়লদের মাধ্যমে বিতরণ করায় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছে তারাই। সত্যিকার ভুক্তভোগীদের হাতেই পৌঁছাতে পারেনি এই প্রণোদনা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়মনসিংহে সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের মতো। এদের মধ্যে পেশাদার সংগঠনের সংখ্যা প্রায় দুশ। বাকিরা সংগঠনের বাইরে থেকে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে সর্বস্বর সংগঠনের সম্পাদক ও ব্রহ্মপুত্র বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের সহায়তা খুব কম কর্মীই পেয়েছে। শুধু প্রশাসনকে প্রভাবিত করে যারা নাম দিতে পেরেছে তারাই সুবিধা পেয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবীণ এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, অনুদান বা সহায়তা প্রদানে একজন সংস্কৃতি কর্মীর রাজনৈতিক পরিচয়টা যখন প্রধান করে দেখা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে দেখা যায় একই লোক শিল্পকলা থেকে টাকা পাচ্ছে, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা থেকেও টাকা পাচ্ছে। ঘুরে-ফিরে একটা গ্রুপই নানাভাবে সব সুযোগ-সুবিধা আদায় করছে। সবাই পরিচিত মুখ বলে মুখ খোলাও যায় না। কে কার শত্রু হব? সরকারের উচিত দল তালিকা করার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট নয়, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মাধ্যমেই করা হোক। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদত হোসেন খান হীলু বলেন, করোনার থাবায় অনেকের চাকরি নাই। তারা এতটাই নাজুক পরিস্থিতির শিকার বলে বোঝানো যাবে না। সরকারি প্রণোদনা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। উদয় দিগঙ্গন আবৃত্তি পরিবারের পরিচালক রুবিনা আজাদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ থাকায় ভার্চুয়ালি নানা আয়োজন করলেও এতে করে মুক্তির স্বাদ মিলছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রবীণ কবিয়াল জানান, জীবন বড় মলিন হয়ে গেছে। বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। লজ্জায় নামটাও প্রকাশ করতে পারছি না। কার বা কাছে গিয়ে বলি ভাত-রুটির কথা?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App