×

জাতীয়

পর্যাপ্ত মজুতেও অস্থিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪৫ এএম

ভোক্তা অধিকার অভিযানেও কমেনি দাম ১০১ প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার বিবেচনাধীন

সারাদেশে পেঁয়াজের দামের অস্থিরতা নিরসনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ১০১ আমদানিকারককে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। সারাদেশে চলছে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগ বা ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। তবে কিছুটা দাম কমেছে পাইকারি বাজারে। এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা কাটাতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী মাসের মধ্যে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই অস্থিরতা কাটবে না। অন্যদিকে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের আশার বাণীতে আশ^স্থ হতে পারছেন না সাধারণ ভোক্তারা। পেঁয়াজ নিয়ে তাদের আতঙ্ক যেন কাটছেই না। অনেকে ধার দেনা করেও কিনে রাখছেন কেজি কেজি পেঁয়াজ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তুলনায় ভোক্তা কমলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম তেমন কমেনি। পাইকারি বাজারে কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে মজুদ আছে ৪ লাখ টন। পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে আরো সাড়ে ৫ লাখ টন আমদানি করলে জানুয়ারি পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি থাকবে না। অর্থাৎ এখনো যথেষ্ট পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে দেশে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা কমাতে ইতোমধ্যে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে ১০১ আমদানিকারকে এলসি খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। এছাড়া পেঁয়াজের দামের এই অস্থিরতা কমাতে আমদানি সহজ করতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই কারণে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য কয়েক দিন আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে এনবিআর সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে। তবে বেশিরভাগ খুচরা দোকানেই দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। যা গতকালও একইরকম ছিল। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা ৯০-১০০ টাকাও দাম চাচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত পরশু থেকে পেঁয়াজের দাম বেশি। পাইকারি বাজারের ৪৫ টাকার পেঁয়াজ মঙ্গলবার ৮২ টাকায় কিনতে হয়েছে। ক্রেতারাও ইচ্ছামতো পেঁয়াজ কিনেছেন। আগে যারা এক-দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, তারা এখন ৫ থেকে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনছেন। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। আর পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে যায়।

এদিকে প্রধান পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকালও দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আগের মতই ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন আড়তদাররা।

অন্যদিকে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় তিনি বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর দুটি কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। একদিকে ব্যবসায়ীরা রপ্তানি বন্ধের সুযোগ নিয়েছে, অন্যদিকে ভোক্তারা অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনেছেন। তাই হঠাৎ করে বাজারে চাপ পড়েছে। আগামী জানুয়ারি নাগাদ ১০ লাখ টন পেঁয়াজ লাগবে, ঘাটতি আছে ৪ লাখ টন। গত কয়েক দিন ধরে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১ মাস সময় পেলেই তুরস্ক, মিয়ানমার ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। এ সময়টা যদি সহ্য করি, দেশের পেঁয়াজ দিয়ে চালাই; তাহলে আর সমস্যা হবে না। এছাড়া গতবার যেসব গ্রুপ সহায়তা করেছে তাদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ এবারো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আমদানির বিষয়ে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার আগেই তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে টিসিবি ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। মিয়ানমার থেকে ১২-১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আনতে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। বাজারে পেঁয়াজের কোনো অভাব নেই। আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। একদিনে দ্বিগুণ দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। মজুতদার ও পাইকাররা বেশি মুনাফার লোভে এ কাজ করেছেন বলেও জানান তারা।

কাস্টমস সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম কাস্টম হাউস বেনাপোল, শুল্ক স্টেশন ভোমরা, হিলি ও সোনা মসজিদ দিয়ে সাধারণত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়। এসব স্টেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আগের এলসি করা পেঁয়াজ বহনকারী শত শত ট্রাক স্থলবন্দরের ওপারে আটকে আছে। এসব ট্রাক গতকাল দেশে প্রবেশ করার কথা থাকলেও বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পেঁয়াজ বোঝাই কোনো ট্রাক সীমান্ত অতিক্রম করেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App