×

সাময়িকী

‘নরকে আজ বৃষ্টি হলো’ জীবনসংগ্রামের কাহিনী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:০২ পিএম

‘নরকে আজ বৃষ্টি হলো’ জীবনসংগ্রামের কাহিনী

বই পাঠ

বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব দিয়েই তরুণ কথাসাহিত্যিক সাফি উল্লাহ্’র প্রথম উপন্যাস ‘নরকে আজ বৃষ্টি হলো’র শুরু। বলা হয়েছে, ‘বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঝগড়ায় আমি নেই। কাউকে বিশ্বাসও করি না, অবিশ্বাসও করি না।’ বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এসে সবকিছু তছনছ করে দেয়া মানুষদের প্রতি এক চরম প্রতিবাদ। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ঔপন্যাসিক সাফি উল্লাহ্ শব্দ নিয়ে খেলেছেন উপন্যাসের পুরোটা জুড়ে। ঠিক এ কারণেই আস্থাভাজন নাকি আস্থাভোজন, এই খেলা খেলেছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি শব্দের অবতারণা করে জীবনমুখী একটি দর্শন তুলে ধরেছেন। আস্থার অজুহাতে কাছে এসে এই আস্থাভোজন করে, অর্থাৎ আস্থার মাথা খেয়ে সর্বস্ব লুটে নিতে চায়। এই চারিত্রিক লাম্পট্য তুলে ধরেছেন আস্থাভোজন শব্দ দিয়ে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় নারীচরিত্র নিরার সাথে রাশেদের বিভিন্ন কথোপকথন ও ঘটনার মাধ্যমে সমাজের নানান দিক তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক, বিশেষভাবে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে চিত্রিত করেছেন, আলোকপাত করেছেন পেডোফিলিয়ার মতো সামাজিক অপরাধের ওপর। এ উপন্যাসে সাধারণ মানুষের জীবন, বিশেষত নারীর জীবন উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠেছে। পেডোফিলিয়া হলো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের বিকৃত যৌনাসক্তির প্রকাশ যার মূল শিকার হলো শিশু। শিশুরা কীভাবে বিকৃত পুরুষদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছে তরুণ এই লেখক। এই অভিজ্ঞতার ফলে ছোট থেকেই নিজের শরীরের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়। তাদের জীবনযাপন কেমন হয়ে ওঠে, তা সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে ‘নরকে আজ বৃষ্টি হলো’ উপন্যাসে। এছাড়া সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রামের কাহিনী আছে উপন্যাসটির পরতে পরতে। অজপাড়া গাঁ থেকে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত প্রাণ ও ব্যক্তিসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পারে, এই চেতনাকে দৃঢ় করা হয়েছে গল্পের বাঁকে বাঁকে। বেঁচে থাকার লড়াই করতে হয় সকলকেই, তবে অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবার নয়, এই মানুষগুলির সাময়িক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বিজয় তারই হয়, রাশেদের সরকারি চাকরি পাওয়ার চিত্র যেন তারই এক প্রতিচ্ছবি। সবকিছুকে সহজ করে দেখার অনন্যসাধারণ দক্ষতার দেখা মেলে রাশেদের চরিত্রে। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত সমাজের চাকরি নির্ভরতা যেভাবে তার বৃত্তকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে, একটি সাদামাটা জীবনযাপনের পুরোটাই চাকরিকে ঘিরে আবর্তিত হয়, লেখক সেটাও বেশ দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া খুব সাধারণ বিষয় যেগুলো তেমন আমলেই নেয়া হয় না, সেগুলোও উঠে এসেছে হাসি-ঠাট্টার ছলে। ফেসবুক কমিটির মিটিং ও সংগ্রাম, ভালো লাগা-মন্দ লাগার যাবতীয় ঘটে ফেসবুকের অন্ধ অরণ্যে, কথাটি সমাজ বাস্তবতাকেই তুলে ধরে। কীভাবে প্রেম, ভালো লাগা, ভালোবাসা, বিস্ময় প্রকাশ, রাগ প্রকাশ, কান্না- সবকিছুর জন্য আলাদা চিহ্ন আছে, আলাদা সংকেত দিলেই ভাব প্রকাশ হয়ে যায়, এ যেন আমাদের প্রতিদিনের অনুভ‚তির আঙুলকেন্দ্রিক জীবন উপাখ্যান। নরক মানুষের তৈরি। নারী সমাজের অর্ধেক। সমাজ বিনির্মাণে তার অবদান অনস্বীকার্য। এই অর্ধাঙ্গিনীর মানসিক যন্ত্রণায় নরকের চিত্র ফুটে উঠেছে নিরার জীবনকাব্যে। নিরা হয়ে উঠেছে সমস্ত নারীর প্রতিভু। লেখক নারী আর পুরুষকে একই বৃন্তের দুটি ফুল হিসেবে দেখিয়েছেন, সেই বৃন্তটির নাম মানুষ। যেই মনুষ্যত্বের গুণে আমরা মানুষ, তারই বন্দনা করা হয়েছে। নরকে বৃষ্টি হয়েছে সেই মানবীয় গুণাবলীর বিজয়গাথায়। নিরারা জীবনযাপনের জন্য শুধু জন্মায়নি, জন্মেছে জীবন নির্মাণের জন্যও। প্রাচীন কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে দুজনকে একসাথে পথ চলতে দারুণ উৎসাহিত করা হয়েছে উপন্যাসটির পুরোটা জুড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবে বিপদে পাশে থাকা, এ যেন এ সমাজে খুবই বিরল এক চিত্র, তা যেন বাস্তব হয়ে উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। যে নারীর চোখে চোখ রাখতে পারে, সে শরীরের লোভ ভুলে যায়। শরীরের বদলে মানুষটাকে চায়। এরকম অনবদ্য কথামালা ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে। পরিশেষে বলা যায়, কথাসাহিত্যিক সাফি উল্লাহ্’র ‘নরকে আজ বৃষ্টি হলো’ সমাজকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে, বিশ্লেষণ করেছে সমাজের লুকিয়ে থাকা একটি রূপ। সে সমাজকে অন্য একটি আঙ্গিক থেকে ব্যাখ্যা করেছে। আলোকপাত করেছে পেডোফিলিয়ার মতো সামাজিক ব্যাধির প্রতি যা প্রতিটা নারীকে মুখোমুখি হতে হয়। এমন একটি কঠিন বিষয়কে গল্পের ছলে উপন্যাসের পুরোটা জুড়ে সাবলীল ভাষায় চিত্রায়িত করেছে। বইয়ের নাম : নরকে আজ বৃষ্টি হলো ধরন : উপন্যাস লেখক : সাফি উল্লাহ্ প্রচ্ছদ : জিজি প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড মূল্য : ১৬৫ টাকা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App