×

জাতীয়

ধান-চাল কেনার ব্যর্থতায় রাশিয়া থেকে আসছে গম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৬ এএম

  • নেপথ্যে দাম বেড়ে যাওয়া, মোটা চালের অভাব এবং সিন্ডিকেট
  • কর্মকর্তাদের গাফিলতি, লটারিতেই প্রায় দেড় মাস সময় পার

সময় বাড়িয়েও সরকার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি সরকার। এখন রাশিয়া থেকে সরকার গম কিনে গুদামগুলো ভরতে চাইছে। এদিকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও সরকার রোপা আমন ধানের ফসলের ওপর ‘পাখির চোখ’ করে আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সেই ফসল উৎপাদন না হলে চাল আমদানি করবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বোরো মৌসুমে সরকার ৮ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও সরকার নির্ধারিত পরিমাণ ধান চাল কিনতে পারেনি। এ রকম পরিস্থিতিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ধান-চাল সংগ্রহের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

খাদ্য অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার ৮ লাখ টন ধানের মধ্যে কিনতে পেরেছে মাত্র ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৫ টন বা ২৭ শতাংশ। ১০ লাখ সিদ্ধ চালের মধ্যে কিনতে পেরেছে মাত্র ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬১৬ টন বা ৬৫ শতাংশ। দেড় লাখ টন আতপ চালের মধ্যে কিনেছে মাত্র ৯৩ হাজার ৪৭২ টন বা ৬৪ শতাংশ।

ধান-চাল কিনতে না পারার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়া, মোটা চালের অভাব এবং সিন্ডিকেটের কারণে সরকার ধান-চালের কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এখন কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী আর হবে? কিছুই হবে না। ধান-চাল পুরোপুরি সংগ্রহ না হওয়ায় আমরা রাশিয়া থেকে ৪ টন গম কিনেছি। এরই মধ্যে ২ লাখ টন গম চলে এসেছে। আরো ২ লাখ টন আসতেছে। তিনি বলেন, আসন্ন রোপা আমন ধানে কী পরিমাণ ফলন হবে আমরা তা জানার চেষ্টা করছি। যদি রোপা আমনে ভালো ফলন হয় তাহলে চাল আমদানি করতে হবে না। আর যদি ফলন আশানুরূপ না হয় সেক্ষেত্রে চাল আমদানি করে গুদামে রাখা হবে। তবে ধান-চাল ঠিকঠাকভাবে সংগ্রহ না হলেও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লটারি করতে করতেই প্রায় দেড় মাস সময় পার হওয়া, গুদামে ধান দিতে গিয়ে নানা ঝক্কি-ঝামেলায় কৃষকের আগ্রহ হারানো, ঘুষ দেয়া, বস্তা কেলেঙ্কারি, করোনা, লাগাতার বৃষ্টি, বন্যার কারণে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আপৎকালীন মজুতের জন্য সরকার প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে স্থানীয় চালকল মালিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে চাল সংগ্রহ করে। এবার মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বোরো মৌসুমে সরকার এ সংগ্রহ অভিযানকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়। এজন্য এবার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অন্যবারের চেয়ে আরো বেশি ধরা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লটারি করতে করতেই প্রায় দেড় মাস চলে যায়। এর মধ্যেই কৃষকের হাত থেকে ধান মজুতদারদের গুদামে চলে গেছে। ফলে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সফল হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণে যে কোনো দুর্যোগের সময় চাল সরবরাহে বিপদে পড়তে পারে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা, আগাম বন্যা ও সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষের আভাস পেয়ে অনেক ঘরে এবার ধান হাতছাড়া করেননি। যারা মজুতদার তারাও ধানকাটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধান কেনা শুরু করেন। মিলাররাও এ সময় ধান মজুত করেন। ফলে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করেছেন, সেগুলো ইতোমধ্যে মজুতদারদের গুদামে চলে গেছে। মিলারদের সঙ্গে চালের জন্য সরকারের যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী, অনেক মিলাররাও চাল দিতে পারেননি।

চাল কেনার জন্য কেজি ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে একই চাল বাজারে ৪০-৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, বেশি দামে ধান কেনার কারণে কম দামে সরকারকে চাল সরবরাহ সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় কর্তব্যরত খাদ্য নিয়ন্ত্রক, কর্মকর্তা ও গুদাম ইনচার্জদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান-চাল সংগ্রহের সময় বেশ কয়েকটি জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদাম ইনচার্জকে বদলি করা হয়েছে। ধান-চাল সংগ্রহের এই সময় তাদের বদলি করার কারণে অনেক জায়গায় ধান-চাল সংগ্রহ করা যায়নি। কারণ একজন খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে স্থানীয় মিলার এবং ধান সরবরাহ কৃষকসহ অনেকের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের নিজস্ব সম্পর্কের কারণেই তারা ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু এই সময় হঠাৎ বদলির ঘটনা সবকিছু থমকে দিয়েছে। নতুন একজন কর্মকর্তা যোগ দিয়েই সাফল্য অর্জন অনেকটা কঠিন। এছাড়া কিছু কিছু জেলার খাদ্য কর্মকর্তারা ধান-চাল সংগ্রহের চাইতে অন্যদিকে মনোনিবেশ করায় যেমন- ভালো চাল গুদাম থেকে বের করে দিয়ে গুদামে নিম্নমানের চাল ঢোকানো, নতুন বস্তার পরিবর্তে পুরাতন বস্তা ঢোকানোসহ নানা পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকাসহ আরো কয়েকটি কারণেও অনেক জেলায় ধান-চাল সংগ্রহ করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App