শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১১ পিএম
গত দুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পত্রিকার ভেরিফাইড আইডিতে রাজধানীর আশুলিয়ায় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে খালি গায়ে তথাকথিত শিক্ষককে একটি শিশুকে বেত দিয়ে বেদম প্রহার করতে দেখা যায়। যা দেখলে গা শিউরে ওঠে! নির্মম বেত্রাঘাতে শিশুটি ফ্লোরে গড়াগড়ি খায় আর চিৎকার করে তবুও তার ওপর বেত্রাঘাত অব্যাহত থাকে! এরকম অমানবিক নির্যাতনের দৃশ্য মাসখানেক আগেও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। এগুলো কোন ধরনের শাসন? ছোট্ট বয়সে কুরআন পড়তে আসা নিষ্পাপ একটি বাচ্চাকে লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে প্রহর করা কোনো শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব হতে পারে না। তথাকথিত শিক্ষকদের নির্মমতার শিকার হওয়া অবুঝ শিশুরা মুখ খুলতে পারে না। কঠোর শাস্তি কিংবা অভিশাপের (বদদোয়া) ভয়ে।
এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইল চালানো নিষিদ্ধ। তাই এরকম হাজারো নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য মানুষের অগোচরে থেকে যায়। ওরা হয়তো থানায় যেতে সাহস পায় না, যে বয়সে শিশুকে তার মা-বাবা কোলে নিয়ে ভাত খাইয়ে দিবে, আদর করে ঘুম পাড়াবে, হাসি-খুশি মনে খেলা করবে, সে বয়সে মা-বাবা তার সন্তানকে শিক্ষকদের আপন অভিভাবক মনে করে স্কুল-মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং দীর্ঘ লালিত নিয়ত বা স্বপ্ন থেকে করেন; বেশ ভালো। কিন্তু যাদের কাছে অর্পণ করেন তারা যদি মানুষ হয়েও অমানুষিক আচরণ করেন তবে সেই শিশু বড় হয়ে সমাজের সঙ্গে কি কোমল আচরণ করবে? ছোট্টবেলায় সে পাঞ্জাবি, টুপি পরিধান করে নামাজ পড়ে, কুরআন শিখতে মাদ্রাসায় আসে, ড্রেস পরে স্কুলে যায়। এমন সুরত নিয়ে যদি একটা শিশু কারো সামনে বসে নিঃসন্দেহে তার বেশ ভালো লাগবে। কিন্তু ঠুনকো অজুহাতে কোমলমতি শিশুদের বেধড়ক মারধর করা কি মানুষের পক্ষে সম্ভব হতে পারে? ৮-১০ বছরের একটা বাচ্চা কি অপরাধ করতে পারে? সেটা কি সহ্য করা যায় না? শিশুদের একটু-আধটু দুষ্টুমি সহ্য করার ক্ষমতা যদি না থাকে তবে শিশুকে পাঠদান কিংবা লালন-পালনের দায়িত্ব নেয়াটা উচিত বলে মনে করি না।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক আগেই বেত-লাঠি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১১ নামে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছিল। যাতে ১১ ধরনের শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি বেশ কমেও গিয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি নজরদারির অভাবে তা আবার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (নুরানি, হাফিজিয়া, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার প্রাথমিক কয়েকটি জামাত) প্রতিনিয়ত চলছে বেতের প্রহর। অবিলম্বে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং আরো অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেত-লাঠি ফের নিষিদ্ধ করা হোক। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারি রাখা চাই। যাতে তারা নিজস্ব প্রহারক বস্তু অর্থাৎ বেত, লাঠি, বাঁশের কঞ্চি ইত্যাদি দিয়ে যেন শিশুদের গায়ে আঘাত করতে না পারে।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]