×

সাহিত্য

লাঙল ঠেলছেন, অটো চালাচ্ছেন খুলনার সংস্কৃতি কর্মীরা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০২ এএম

লাঙল ঠেলছেন, অটো চালাচ্ছেন  খুলনার সংস্কৃতি কর্মীরা!

নৃত্যাঞ্চলের নাচের একটি দৃশ্য -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

শিল্পনগরী খুলনা। সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার। এখানে আছে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা, চার্লির কুঠিবাড়ী, দক্ষিণডিহি, সেনহাটি, বকুলতলা, শিরোমণি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিসৌধ, মহিম দাশের বাড়ি ও খালিশপুর সত্যাশ্রম। আরো আছে সবচেয়ে বড় কুটুম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি! কিন্তু করোনার দাপটে সব সুন্দর, সব সংগীত আজ গেছে যেন ইঙ্গিতে থেমে! করোনাকালের প্রায় ৭ মাস স্থবির হয়ে আছে খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

মঞ্চগুলোতে আলো জ্বলছে না। কোনো আয়োজন নেই মিলনায়তনে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শত শত সাংস্কৃতিক সংগঠক, প্রশিক্ষক ও কর্মী। গৃহবন্দি সময়ে প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ আড্ডার আয়োজন করে সংস্কৃতি কর্মীরা কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, গান, পাপেটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন। অথচ তাদের অনেকের ঘরেই জ্বলছে না ঠিকমতো চুলা। অসচ্ছল এসব শিল্পীদের সংকটময় মুহূর্তে সরকারের নামকা-ওয়াস্তে প্রণোদনা ছাড়া কেউ সহায়তা করছেন না বলে জানান সংস্কৃতি কর্মীরা। এসব সাংস্কৃতিক সংগঠনে রয়েছে সংগীতশিল্পী, ঢোল বাদক, বাঁশি বাদক, অভিনয়শিল্পী, যাত্রাশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও মঞ্চশিল্পী। অথচ এসব কর্মী এখন পুরোপুরি কর্মহীন অবস্থায় গৃহবন্দি রয়েছেন। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে কৃষিকাজে লাঙল হাতে মাঠে নেমেছেন, তরকারি বিক্রি করছেন, আবার ভ্যান কিংবা অটো চালাচ্ছেন কেউ কেউ। খুলনায় সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজারের মতো। এদের মধ্যে জোটভুক্ত সংগঠনের সংখ্যা মাত্র ২০০। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত আছে ৩৩টি। বাকিরা সংগঠনের বাইরে থেকে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে খুলনা বিভাগের বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন জুলিয়াস ভোরের কাগজকে বলেন, ৬ মাস ধরেই সংস্কৃতি কর্মকাণ্ড বন্ধই রয়েছে। কিন্তু জীবন থেমে নেই। যারা সংস্কৃতি চর্চা করে জীবন চালাচ্ছেন তাদের অবস্থা চরম পর্যায়ে। তাদের কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে তরি-তরকারি বিক্রি থেকে শুরু করে ভ্যান, রিকশা ও অটো চালাচ্ছেন। সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। যাদের সহায়তা পাওয়ার কথা, তাদের অনেকেই পায়নি।

অরিন্দম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিচালক নুরুল ইসলাম মালিক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে হাতে কাজ থাকুক আর না থাকুক, পেটে খাবার থাকুক বা না থাকুক, মাস শেষে তাদের একটি মোটা অঙ্কের টাকা বাড়ির মালিকদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। অনেক শিল্পী জীবনের তাগিদে চাষাবাদও করছেন। যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, করোনার শুরুতে নিজস্ব প্রচেষ্টায় শিল্পীদের একটা তালিকা করে ১৫০ জনকে একবারের জন্য চাল, ডাল, তেল ও লবণ কিনে দিয়েছি। গ্রামাঞ্চলে গিয়ে একটানা ১২ দিন ধানও কেটে দিয়েছি চাষিদের। খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজিত কুমার সাহা বলেন, করোনার প্রথম দিকে খুলনা থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে খুলনার ৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৩৮৬ জনের জন্য সহায়তার একটি তালিকা পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী, খুলনা থেকে দুর্যোগকালীন আর্থিক অনটনে থাকা ১০০ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App