×

সারাদেশ

খাতুনগঞ্জে আড়তের পেঁয়াজ উধাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩১ এএম

‘রবিবার বিকালেও দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত ও গুদামভর্তি পেঁয়াজ দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। আড়তে আদা-রসুন ছাড়া পেঁয়াজ উধাও। ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধের খবরে খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বেশি মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। দুয়েকটি আড়তে পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। কিন্তু আগের আমদানি করা মজুতকৃত পেঁয়াজ কোথায় গেল? রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কেন পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হলো’- এই প্রশ্ন নগরীর চাক্তাইয়ের মধ্যমানের ব্যবসায়ী পলাশ চৌধুরীর। আড়তদারদের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সদুত্তোর না পেয়ে ক্ষোভের সঙ্গে ভোরের কাগজ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে দেশের বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্য বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার খবরে খুচরা বাজারেও ১ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। সোমবার সকালে ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল ৩৭ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার মানভেদে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ সোমবার বিক্রি হয় ৪২-৪৫ টাকায়, মঙ্গলবার সেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও।

নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে এমন আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতা ও মুদির দোকানিরা ভিড় করছেন খাতুনগঞ্জের আড়তে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতাদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। এতে অনেকে পেঁয়াজ কেনার জন্য ছুটে যান দোকানে। এদিকে বিক্রেতারা জানান, আমদানি বন্ধের ফলে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে। তাই আপাতত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখে মজুত করার দিকে ঝুঁকছেন তারা। অনেক খুচরা ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ কিনতে খাতুনগঞ্জে গিয়ে খালি হাতেও ফিরে আসতে হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকান ও সুপারশপে ঘুরে দেখা যায়, অনেক দোকানে ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনার জন্য লাইন ধরেছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশঙ্কায় চাহিদার কয়েকগুণ বেশি পেঁয়াজ কিনছেন।

এদিকে আগে আমদানি করা মজুতকৃত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বাড়ানোয় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত রয়েছে। পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হয়ে ভোক্তা সাধারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার জন্য খুচরা দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এই সুযোগে কিছু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী অযথা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, এতদিন তো পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল না। গুদামভর্তি পেঁয়াজ ছিল। ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গুদাম ও আড়ত থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আগের আমদানি করা পেঁয়াজ কেন এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হবে? এটা পুরোপুরি সিন্ডিকেটের কারসাজি। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রশাসন যদি এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়- তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত রয়েছে, তাতে ভারতের রপ্তানি বন্ধের প্রভাব তাৎক্ষণিক পড়ার কথা নয়। প্রশাসনকে সবসময়ই বাজার মনিটরিংয়ে কড়াকড়ি নজর রাখতে হবে। নাজের হোসাইন মনে করেন, প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না বলেই তারা ক্রেতাদের জিম্মি করে মর্জি মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

আগের আমদানি করা পেঁয়াজ কেন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস ভোরের কাগজকে বলেন, এর জবাব তো আমি দিতে পারব না। রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় একটা প্রভাব তো বাজারে পড়বেই। এটা শুধু খাতুনগঞ্জ নয়, সারাদেশের বাজারেই পড়েছে। গুদামে পেঁয়াজ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সোমবার বিকাল থেকেই প্রচুর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আতঙ্কে সবাই পেঁয়াজ কিনছে। যার দুই বস্তা লাগবে, সে কিনছে ২০ বস্তা। তাই বাজারে এটার প্রভাব পড়েছে।

এদিকে ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে গতকাল একদিনে প্রায় ১১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্রের (আইপি) জন্য আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত ১২ দিনে মোট ১৯ হাজার ৮৪৩ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর শাখার মাধ্যমে চীন, মিয়ানমার, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মিসর থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানির জন্য আবেদন করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আইপির আবেদন করেছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ১০১ টনের আইপি দেয়া হয়। গতকাল একদিনেই ২১টি আইপির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে আসবে বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App