×

রাজনীতি

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই এক বছর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:১৮ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৫টি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। এরই মধ্যে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বেই চলছে সংগঠনগুলো। হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নির্দেশ ছিল পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার। শীর্ষ নেতারা গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করছেন না। সংগঠন চলছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের একক ইচ্ছায়। আর দলীয় পরিচয় ছাড়াই ঘুরছেন পদপ্রত্যাশীরা।

আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২৩ নভেম্বর। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে সামস পরশ চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হাসান খান নিখিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১২ সালের ১৪ জুলাই সংগঠনটির ষষ্ঠ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ এবং ৮ জুলাই উত্তর যুবলীগেরও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন উত্তরে মাইনুল হাসান খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। উত্তরের সভাপতি নিখিল বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন জাকির হোসেন বাবুল। অন্যদিকে কারাগারে আটক ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট বহিষ্কৃত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মাইনউদ্দিন রানা। আর মিল্কী হত্যা মামলার আসামি হিসেবে পলাতক রয়েছেন ওয়াহিদুল আলম আরিফ। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন রেজাউল করিম রেজা।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ সদস্যের হলেও, বিগত ১১ মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি সংগঠনটি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল বলেন, করোনাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কমিটি নিয়ে বসতে পারিনি। পদপ্রত্যাশীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সেগুলো যাছাই-বাছাই করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জমা দিতে পারব। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনের বিষয়ে নিখিল বলেন, এ দুটি ইউনিট আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা মহানগরীর সম্মেলনের বিষয়ে নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যখন সিদ্ধান্ত দেবেন, তখনই হবে।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে নির্মল রঞ্জন গুহ ও কে এম আফজালুর রহমান বাবু। একইদিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও ঘোষণা হয়। উত্তরে ইসহাক মিয়া সভাপতি ও আনিসুর রহমান নাঈম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে কামরুল হাসান রিপন সভাপতি ও তারিক সাঈদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ১১ মাসেও কেন্দ্রীয়সহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। পদপ্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ।

তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বারবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও নানা অজুহাতে কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করছেন না সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ৩ বছর মেয়াদি কমিটির প্রায় ১ বছর ধরেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সংগঠন চালাচ্ছেন। তারা গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করছেন না। সম্মেলন হয়েছে ১১ মাস আগে। অথচ আমাদের কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি জমা দিতে পারিনি। তবে ৬ মাস আগে আমরা ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছি। তিনি অনুমোদন দিলেই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করব। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেননি। আমরা তাদের তাগিদ দিয়েছি, অতি দ্রুত কমিটি জমা দিতে।

এর আগে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। ওই সম্মেলনে মোল্লা মো. আবু কাওছার সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে ৬ নভেম্বর। ওই দিন দ্বিতীয় অধিবেশনে কৃষিবিদ সমীর চন্দ চন্দ্রকে সভাপতি ও এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিরও প্রায় ১১ মাস। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আজো। সংগঠনটির সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ বলেন, ৬ নভেম্বর দায়িত্ব নিয়ে ২৩ নভেম্বর আমরা ১১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া অনুমোদনের জন্য দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি। বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কমিটি এতদিন অনুমোদন হয়নি। আশা রাখি নেত্রী অনুমোদনের পর দ্রুতই আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারব। এর আগে কৃষক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। ওই সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতা মোতাহার হোসেন মোল্লা সভাপতি ও খোন্দকার শামসুল হক রেজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন। এতে সভাপতি হয়েছেন ফজলুল হক মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু। এছাড়া কার্যকরী সভাপতি হন মোল্লা আবুল কালাম আজাদ। এই সংগঠনটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে পারেনি।

২৯ নভেম্বর হয় আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাইদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শেখ আজগর নস্কর। এবারই প্রথম সংগঠনটি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা পেয়েছে। গঠনতন্ত্রে ১১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে পারেননি শীর্ষ নেতারা। তবে কমিটি ঘোষণার প্রথম দিনই আরো বেশ কয়েকটি পদে কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সম্মেলন ও নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্বে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৪ নেতা এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক। জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, অনেকেই কমিটি জমা দিয়েছেন। যারা এখনো দেননি, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের কমিটি জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর যাছাই-বাছাই করে দলীয় সভাপতির অনুমোদন পেলেই সব পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর-দক্ষিণের কমিটির বিষয়ে নানক বলেন, এই দুটি ইউনিটে সম্মেলনের সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবে প্রেসের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।

আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা পড়েছে। যুবলীগসহ আরো যেগুলো কমিটি এখনো জমা হয়নি, সেগুলোও খুব দ্রুত জমা দিতে বলা হয়েছে। যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকতে না পারে, সে জন্য যাছাই-বাছাই করে আমাদের নেত্রী সেসব কমিটির চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। তিনি আরো বলেন, শুধু সহযোগী সংগঠনগুলোই নয়, এরই মধ্যে যেসব জেলা ও মহানগরীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাদেরও ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি জমা দিতে বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App