×

সারাদেশ

কুড়িগ্রামে পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে চলছে চিকিৎসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৩ এএম

কুড়িগ্রামে পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে চলছে চিকিৎসা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন ঝাড়ুদার মিনা রানী -ভোরের কাগজ

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে চলছে কুড়িগ্রামের চিকিৎসাসেবা। মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর দেখভালের অভাবে নিয়মিত খোলা হয় না জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। ফলে সরকারের ভিশন মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন মহিলা মিনা রানী ভবনে ঝাড়ু দেয়ার কাজ করছেন। পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করেই তিনি চিকিৎসাদানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। প্রেসক্রিপশন করতে না পারলেও রোগীর সমস্যা শুনেই চিকিৎসা দেন। বেশকিছু ওষুধের নামও মুখস্ত।

তিনি রোগীদের মাঝে ওষুধ বিতরণ করেন। গেল তিন বছর ধরে মাত্র ৫০০ টাকায় কাজ করেন পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে। জানান ডাক্তার ডেপুটেশনে অন্যত্র সুবিধা ভোগ করছেন। উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট থাকলেও তারা নিয়মিত আসেন না। ফলে মিনা রানীই রোগীদের চিকিৎসা দেন। তারা মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান। এই চিত্র নাগেশ^রী উপজেলার বল্লভের খাস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের। দীর্ঘদিন ধরে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বল্লভের খাস ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী মিনা রানী বলেন, ৩ বছর থেকে কাজ করছেন। রোগীর চাপ থাকলে তিনিই ডাক্তারকে সহযোগিতা করেন। ডাক্তার না আসলে রোগীর ওষুধ দিয়ে থাকেন বলে অকোপটে স্বীকার করেন।

একই উপজেলার জনবল না থাকায় মূল ভূ-খণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এই ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজ্জাক বলেন, কয়েক বছর আগে সপ্তাহে একদিন করে খোলা হতো এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু দীর্ঘদিন আর এটা খোলা হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে গেলেও টাকার অভাবে তা পায় না।

কেদার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ ভবন। জানালার গ্লাস ভাঙা। রোগীদের বেড জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অবহেলা আর অযত্নে মরীচিকা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের দেয়া কোটি-কোটি টাকা মূল্যের সরঞ্জামাদি। অভিযোগে জানা যায় জেলার বেশির ভাগ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর অবস্থা একই রকম।

বল্লভেরখাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও চালু না থাকায় তার ইউনিয়নে চরাঞ্চলসহ গ্রামীণ জনপদের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। তার ইউপি ভবন না থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দোতলায় পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসেন ইউসুফ বলেন, বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেন না। তিনি বলেন, সীমান্ত আর নদী ভাঙন প্রবণ এলাকার গরিব মানুষ সরকারের দেয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৮ উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ৫৮টি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ৪০টি এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে রুলার ডিসপেনসারি (আরডি)-১৮টি।

মেডিকেল অফিসার পদ ৩৫টির মধ্যে শূন্য ২১টি। উপসহকারী ৪০টি পদের মধ্যে শূন্য ১১টি। শূন্য রয়েছে ফুলবাড়ির বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড়, কাশিপুর। নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ। চিলমারীর নয়ারহাট। রৌমারীর চরশৌলমারী এবং শৌলমারী। ভূরুঙ্গামারীতে তিলাই এবং পাথরডুবি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। নদী ভাঙনে ইতোপূর্বে বিলীন হয়েছে চিলমারী অস্টমির চর, রমনা এবং রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দু’বিভাগের কর্তৃত্ব থাকায় অনিয়মের দায় এককভাবে নিতে রাজি নন তিনি।

জনবল সংকট এবং কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা সেবা দানে কিছুটা ব্যাহত হবার কথা স্বীকার করেন তিনি। দ্রুত এসব সমস্যা কেটে যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App