×

জাতীয়

সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়েই ঘূর্ণায়মান করোনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫১ এএম

শীতে আসবে দ্বিতীয় ঢেউ?

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের সংক্রমিত অনান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেকটাই ভিন্ন আচরণ করছে এই ভাইরাস। আর তাই গত ৬ মাসেও ভাইরাসটির সংক্রমণের গতি প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল সম্প্রতি জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ বদলেছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, আর বাংলাদেশে এই হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ইউরোপীয় দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঢেউ শেষে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। কিছু দেশে দ্বিতীয় ঢেউও শেষের দিকে। আর বাংলাদেশে এখানে সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে শীত মৌসুমে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের তৃতীয় ধাপে আছে বাংলাদেশ। একটি পরিবারের মধ্যে যখন কোনো ভাইরাস বিস্তার ঘটে তখন তাকে প্রথম ধাপ, একটি এলাকায় ভাইরাসের বিস্তারকে দ্বিতীয় ধাপ আর সামাজিক পর্যায়ে যখন ভাইরাসের বিস্তার ঘটে তখন তাকে তৃতীয় ধাপ বলে। আমাদের দেশে ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সজাগ আছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

২৮ আগস্ট কোভিড-১৯ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে অনলাইন সভা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সভায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সভায় অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, সামনেই শীতের মৌসুম। অনেকেই ভাবছে শীতের সময় সেকেন্ড ওয়েব বা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কমিটির মতামত কী এবং অধিদপ্তর এর জন্য কী করতে পারে? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যবিদরা জানান, এমন পরিস্থিতির জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে সংক্রমণ কমানো যাবে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার বিদায় হওয়ার এখনো অনেক বাকি এবং বিশ্বের অনেক দেশেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের থেকেও ভয়াবহ হচ্ছে। তবে প্রথম ধাক্কার অভিজ্ঞতায় যারা শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে যেসব দেশ তারা দ্বিতীয় ঢেউয়ে নিজেদের সামলে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্য জানাচ্ছে তাতে দেখা যায়, সংক্রমণের হার কমছে। তবে এখনো সংক্রমণ প্রথম ঢেউয়ের মধ্যেই আছে। যখন এই সংক্রমণ আরো কমে গিয়ে আবার বাড়বে তখন বলা যাবে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে করোনার প্রথম ঢেউ দীর্ঘ হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের মাস্ক পড়তে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন নিশ্চিত করা এবং হাঁচি-কাশি শিষ্ঠাচার মেনে চললে আমরা করোনা থেকে বাঁচতে পারি। কিন্তু চারপাশে যা দেখছি তাতে দেখে মনে হয় না করোনা ভাইরাসের মতো একটা মারাত্মক ভাইরাস দেশে আছে।

শীতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে। আমি মনে করি, শীতের সময় এমনিতেও সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডাজ্বর বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষত ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনো ভাইরাস, রাইনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এত ভাইরাসের ভিড়ে তখন হয়তো করোনা ভাইরাস জায়গা নাও পেতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোসতাক হোসেনও মনে করেন দেশে এখনো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঢেউই শেষ হয়নি। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ কমেছে। বর্তমানে শনাক্তের হার ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে সংক্রমণ কমে গেছে বা প্রথম ঢেউ শেষ হয়ে গেছে তা এখনই বলা যাবে না। মহামারি বিদ্যা অনুযায়ী, করোনার শনাক্তের হার দৈনিক ৫ শতাংশের নিচে নামার পর তা যদি কিছু দিন স্থিতিশীল থাকার পর আবার বাড়তে থাকে তাহলে বলা যাবে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে।

কবে নাগাদ সংক্রমণ কমতে পারে এবং প্রথম ঢেউ শেষ হতে পারে- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সংক্রমণ কমে আসবে। আর আমাদের দেশে শীতকাল শুরু হয় নভেম্বর মাসে। ওই শুষ্ক মৌসুমে জ্বর-সর্দি-কাশির মতো অসুখগুলো বেশি হয়। এছাড়া বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশ বেশি হয়। ওই সময় সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দুষ্কর হয়ে পরে। করোনাকালেও যদি তা হয়ে থাকে তাহলে ওই সময়ে সংক্রমণ বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরামর্শক কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্স কমবেশি তিন মাসে করোনার প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এসব দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হানা দিলে প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরো কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা বারবারই ভুল পথে হেঁটেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষাও হয়নি। ফলে করোনার প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘ হচ্ছে। করোনার ঢেউ নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App