×

সম্পাদকীয়

শিক্ষায় ক্ষতি পোষাবে কীভাবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০০ পিএম

করোনার অভিঘাতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত চরম বিপর্যয়ের মুখে। মহামারিতে প্রকট হচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা। পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাসূচি এলোমেলো হয়ে গেছে। এক দশক ধরে পূর্বনির্ধারিত শিক্ষাসূচি অনুযায়ীই চলছে শিক্ষা ব্যবস্থা। দীর্ঘ এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে তার বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার আর কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পড়াশোনা ছাড়া ক্ষতি পোষানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেই। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে পিছিয়ে যায় এইচএসসি পরীক্ষাও। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি সাময়িক পরীক্ষা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় দ্বাদশ শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দিয়েছে কলেজগুলো। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে নেয়া যাবে তার কোনো তথ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগামী ৩ অক্টোবরের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও পাঠদান না হওয়ার কারণে জেএসসি, জেডিসি, পিইসি, ইইসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাড়ে ৪০০ পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু করা হলেও শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই যুক্ত হতে পারেনি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় তাও সুফল বয়ে আনছে না। বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটা এখন চিন্তাই করা যায় না। বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা; তাদের না আছে ইন্টারনেট সাপোর্ট, না আছে ল্যাপটপ; স্মার্টফোন থাকলেও নেটওয়ার্কিং ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাব তো আছেই। উপরন্তু অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পারিবারিক অবস্থা আর্থিক অনটনের মধ্যে যাচ্ছে, যার ফলে উদ্বিগ্নতা আর টানাপড়েনের মধ্যে অনলাইন লেখাপড়ায় মনস্থির এক দুরূহ ব্যাপার। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিপর্যয়কর অবস্থা কবে কাটবে কেউ তা বলতে পারছে না। এদিকে নীতিনির্ধারক কোনো কোনো পর্যায়ে অটো প্রমোশনের কথা বলা হচ্ছে; একে তো সিলেবাস একেবারেই অসম্পূর্ণ, অন্যদিকে অটোপ্রমোশন, এর ফলে শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখা কষ্টকর হবে। করোনাকাল যদি আরো দীর্ঘায়িত হয় তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় শূন্যতা দেখা দেবে। এমতাবস্থায় শিক্ষাকাল দীর্ঘ বা সেশনজট হলেও সেটা মেনে নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই ডিভাইস, ইন্টারনেট সাপোর্ট দিয়ে সরকার এগিয়ে আসতে পারে। এককথায় সব শিক্ষার্থী যাতে এর সুবিধা নিতে পারে সেটিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App