×

জাতীয়

সময়ের বিবর্তনে ভালো নেই পাটনী সম্প্রদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:০৮ পিএম

সময়ের বিবর্তনে ভালো নেই পাটনী সম্প্রদায়

পাটনী সম্প্রদায়

সময়ের বিবর্তনে ভালো নেই পাটনী সম্প্রদায়

পাটনী সম্প্রদায়

দেশে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী পাটনী সম্প্রদায়ের মূলমন্ত্র ছিল, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। এ উক্তিটির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এটি শুধু একটি উক্তিই নয়, এটি পাটনী সম্প্রদায়ের উদারতার এক জ্বলন্ত প্রমাণও বটে। জাতিগতভাবে পাটনী সম্প্রদায়ের লোকেরা উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেন। তবে সময়ের বিবর্তনে আজ ভালো নেই তারা। নানা অবহেলা ও বঞ্চনায় প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে তাদের অস্তিত্ব। এক সময় পাটনীদের যে খেয়াঘাট ও বাঁশের শাকো ছিল কালের বিবর্তনে এখন সেখানে নির্মাণ হয়েছে ব্রিজ ও কালভার্ট। একদিকে যেমন তারা হচ্ছেন কর্মহীন অন্যদিকে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ঐতিহ্য।

আগেকার দিনে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার সন্তান অথবা আপনজনরা খেয়াঘাটে আসত ঘাটের মাঝিকে টাকা দিতে। জীবিত অবস্থায় তিনি যদি কখনো টাকা না দিয়ে ঘাট পার হয়ে থাকে তার ঋণ পরিশোধ করতেই হয়তো এই টাকা দেয়া হতো। টাকা না থাকলেও খেয়াঘাটে অনেককে বিনাপয়সায় পার করে দিত পাটনীরা।

পাটনীদের এই উদারতার বিষয়টি বাংলা সাহিত্যের অনেক লেখকই তাদের লেখনিতে তুলে ধরেছেন। ১৭৫২ সালে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর তার ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের ‘মানসিংহ ভবানন্দ উপাখ্যানে’র ইশ্বরী পাটনী চরিত্রের মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ইশ্বরী পাটনী হতদরিদ্র ঘাটের মাঝি হয়েও তার উদার চিন্তা-চেতনার জন্য ইতিহাসের বিখ্যাত চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। অন্নপূর্ণা (দেবী দুর্গা) গৃহবধূর বেশে খেয়া পার হতে আসেন। অন্নপূর্ণা নৌকায় উঠে সেঁউতির উপর পা রাখলে সেঁউতি সোনায় পরিণত হয়। তখন খেয়া পারাপারকারী ইশ্বরী পাটনী বুঝতে পারে ইনি সাধারণ কোনো মানুষ নয়, ইনি দেবী। অন্নপূর্ণা পাটুনীকে বর চাইতে বললে পাটুনী নিজের জন্য বর না চেয়ে সন্তানের জন্য বর চান। দেবী আশা পূরণ করে বলেন, ‘তোমার সন্তান দুধেভাতে থাকবে’।

ইশ্বরী পাটনী নিজের স্বার্থচিন্তা না করে সন্তানের স্বার্থ ও সমৃদ্ধির কথা ভাবে। সে চাইলেই তার নিজের জন্য ধন-সম্পদ চাইতে পারত। তার এই প্রার্থনার মধ্যে বাঙালির নিজস্বার্থ উপেক্ষা করে সন্তানের কল্যাণ কামনার চিরন্তন মানসিকতাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। তিনি জগতের পিতা রূপে পৃথিবীর সমস্ত সন্তানের মঙ্গল কামনা করেছেন। তার এই উদারতা দেশের পাটনী সম্প্রদায়কে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পূর্বপুরুষদের মতো উদার ও অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সমাজ ও সম্প্রদায়কে আরো অনেক দূর নিয়ে যেতে পারি, তার লক্ষ্যে পিছিয়ে পড়া সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী পাটনী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে আনতে ভার্চুয়াল ফোরামের যাত্রা শুরু হয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের পাটনী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর জন্যও কাজ করছে এই ফোরামটি।

[caption id="attachment_241730" align="aligncenter" width="1000"] পাটনী সম্প্রদায়[/caption]

পাটনী কমিউনিটির পৃষ্ঠপোষক মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক উপপরিচালক ড. সাধন কুমার বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু কিছু এলাকায় বিকল্প পেশা না থাকায় পাটনী কমিউনিটির অনেক সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি বলেন, যেখানে খেয়াঘাটের পরিবর্তে ব্রিজ কালভার্ট নির্মিত হয়েছে সেখানে ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে পাটনীদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবে ফোরামটি। বিগত কয়েক মাসে এই ফোরামের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফোরামের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অনেক সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধান হিসাব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত দাস ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে পাটনী কমিউনিটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের ৫৫ জনসহ প্রায় ৮ শতাধিক সদস্য রয়েছে এই ফোরামের অধীনে। তিনি বলেন, সুযোগের অভাবে পাটনী কমিউনিটির সদস্যরা শিক্ষা দীক্ষায় অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে অনেকটা পিছিয়ে। তবে সুযোগ পেলে এরা অন্য কোনো সম্প্রদায় থেকে পিছিয়ে নেই সেটা ইতোমধ্য প্রমাণিত।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের এ সম্প্রদায়ের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় উচ্চ পদে কর্মরত রয়েছে; শিক্ষা-দীক্ষায়ও অনেকটাই এগিয়ে। তবে প্রকৃত অর্থে এর সংখ্যা খুব কম। তাই পাটনী সম্প্রদায়ের সবাইকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রা দাস ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের সংগঠনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এই সংগঠনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া পাটনী সম্প্রদায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও তাদের এগিয়ে নেয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App