×

বিনোদন

শঙ্কা কাটছে না হল মালিকদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৪০ এএম

শঙ্কা কাটছে না হল মালিকদের

সিনেমা হল/ফাইল ছবি

আজকে ৭০০ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। ধরুন আমার সিনেমা হল সেখান থেকে ২ কোটি টাকা পেল। কিন্তু দর্শক না থাকলে ব্যবসা হবে না। ফলে ঋণ করা ২ কোটি টাকার সুদ গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ কোটিতে। সে টাকা কোথায় পাবো তখন? তাই এই মুহূর্তে আমাদের এক্সপেরিমেন্টাল কিছু সিনেমা চালাতে হবে। যেমন বিদেশি বেশ কিছু সিনেমা আমাদের হলগুলোতে মুক্তি দিয়ে দর্শকদের হলমুখী করতে হবে।

মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকেই দেশে করোনার প্রভাবে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ সময়ে সব প্রকার গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকায় সব প্রকার শুটিং ও সিনেমা হল বন্ধ করা হয়। যার ফলে নতুন সিনেমার শুটিংসহ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমাগুলো আটকে যায়। দীর্ঘ সময় বিরতির পর জুনের মাঝামাঝি এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং শুরুর করার অনুমতি মিললেও এখন পর্যন্ত সিনেমা হল খোলার কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

মাঝে দুটো বড় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সিনেমা হল খোলার ব্যাপারে কথা চললেও শেষমেশ বন্ধই রাখা হয়। তবে যেহেতু শুটিং শুরু হয়েছে এবং দেশের অবস্থা খানিকটা স্বাভাবিক, সে বিষয় পর্যালোচনা করে এবার সিনেমা হল খুলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপে সিনেমা হল সংস্কারের লক্ষ্যে ৭০০ কোটি টাকা স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কবে নাগাদ এ ঋণ হল মালিকদের হাতে পৌঁছাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু এখনো জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশ প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদুল আলম খসরু জানান, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে এ দিনই সিনেমা হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু সিনেমা হল খুলে দিলেই দর্শক আসবে কিনা আবার আসলেও কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, দীর্ঘ সময় দর্শক সিনেমা হল বিমুখ। তাছাড়াও বর্তমানে দর্শক মজেছে বৈশ্বিক সিনেমার বাজারের প্রতি। যেখানে হাতের নাগালেই নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম সহ জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে পছন্দ অনুযায়ী বিশ্বের নানা সিনেমা দেখার সুযোগ মিলছে সেখানে ঝুঁকি নিয়ে কেন সিনেমা হলে যাবে?

তবুও আশায় বাঁচে মানুষ। ফলে সিনেমা হল খুলে দিতে অনুরোধ বারবারই শোনা যাচ্ছে। যদিও শিগগিরই সিনেমা হল খোলার ঘোষণা হয় তাহলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিনেমা হলগুলো কতটা কাজ শুরু করেছে, জানতে বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের ব্যবস্থাপক শাহীন জানান, এই মুহূর্তে আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। কারণ এখনো আমাদের সঙ্গে মালিকের কোনো যোগাযোগ হয়নি এবং কোনো নির্দেশনাও পাইনি। ফলে আমরা এখনো নিশ্চিত নই কবে হল খোলা হবে। সিনেমা হল খোলার ব্যাপারে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে হয়তো প্রস্তুতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। না হলে কি প্রস্তুতি নেব!

এদিকে মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে অনেক সিনেমা হল এখন গোডাউনে পরিণত হয়েছে। এর আগে কয়েকবার তারা হল খোলা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে কিন্তু খোলার ঘোষণা হয়নি। তাই এখন নির্দিষ্ট সময় না জেনে কেউই কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে না। তবে আমাদের সিনেমা হল প্রতিদিনই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তবে এ প্রস্তুতি দর্শকে কতটা হলমুখী করবে? এ প্রশ্ন এখন বড় প্রশ্ন। নতুন সিনেমা যেগুলো রয়েছে তাদের প্রযোজকরা দর্শক শূন্য হলে সিনেমা মুক্তি দিবে? দিবে না। তাহলে আমরা হল মালিকরা হল খুলে কি করব? আজকে ৭০০ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। ধরুন আমার সিনেমা হল সেখান থেকে ২ কোটি টাকা পেল। কিন্তু দর্শক না থাকলে ব্যবসা হবে না। ফলে ঋণ করা ২ কোটি টাকার সুদ গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ কোটিতে। সে টাকা কোথায় পাবো তখন? তাই এই মুহূর্তে আমাদের এক্সপেরিমেন্টাল কিছু সিনেমা চালাতে হবে। যেমন বিদেশি বেশ কিছু সিনেমা আমাদের হলগুলোতে মুক্তি দিয়ে দর্শকদের হলমুখী করতে হবে। যখন দর্শক হলমুখী হবে তখন আমাদের নতুন সিনেমাগুলোকে মুক্তি দিতে হবে। এভাবে কাজ না করলে আমরা দাঁড়াতে তো পারবই না উপরন্তু সিনেমা হল বিক্রি করে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তাছাড়াও অনেকেই মনে করছেন সিনেমা হল খুলেই বা কি হবে যদি দেখানোর মতো সিনেমা না থাকে? সিনেমা হল সংস্কারের জন্য ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমা নির্মাণের জন্যও একটি তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, প্রতি বছর ২০/২৫টি সিনেমা নির্মাণ করা যায় এমন একটি তহবিল গঠন করে দেয়া জরুরি। কারণ সিনেমা হল খুলে বসে থাকলে তো হবে না, সেখানে সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির যে অবস্থা সেখানে যে সিনেমা নির্মাণ হয় তা দেখিয়ে সিনেমা হলের লাভ অন্যান্য সময়েই হয় না। সেখানে করোনাকালের মতো এমন পরিস্থিতিতে করুণ অবস্থা। সুতরাং সিনেমা হলের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়াও সিনেমা নির্মাণের জন্য আলাদাভাবে একটি তহবিল গঠনের জন্য অনুরোধ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App