×

রাজধানী

ফ্লাইওভারে ভিন্ন কৌশলে ছিনতাইয়ের হিড়িক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪৫ এএম

  • সুতা টানিয়ে, বেড়িকেট দিয়ে কিংবা চালক বেশে চলে ছিনতাই
  • রাতের অন্ধকারে বেশি সক্রিয় ছিনতাইকারীরা

গভীর রাত কিংবা ভোরে ঢাকায় ছিনতাইয়ের জন্য হটস্পট হয়ে উঠেছে রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো। অভিনব সব কৌশলে ফাঁকা ফ্লাইওভারে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফ্লাইওভারে বাতি না জ্বলা এবং গভীর রাতের নির্জন পরিবেশ বিরাজ করায় ছিনতাইয়ের নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। এ কাজে বেশির ভাগ সময় ভিকটিম হচ্ছেন মোটরসাইকেলচালক, সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী এবং পথচারীরা। সুযোগ বুঝে ফ্লাইওভারের ২ পাশ থেকে সাদা নাইলনের সুতা ধরে মোটরসাইকেল আরোহীর সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আবার চালক বেশে সিএনজিতে যাত্রী এনে ফ্লাইওভারের উপরে লুট করা হচ্ছে সবকিছু। কখনো কখনো বেরিকেট দিয়েও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব কাজে বাধা দিলে প্রাণ খুয়াতে হচ্ছে ভিকটিমদের। সম্প্রতি রাজধানীতে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ফ্লাইওভারগুলোতে নিরাপত্তা বিধান করে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা। না হলে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে রাত যত গভীর হয় ফ্লাইওভারগুলো তত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রাজধানীর মহাখালী, বনানী, মালিবাগ-মগবাজার, কুড়িল বিশ^রোড এলাকায় ফ্লাইওভার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যানজট লেগে যায়। এ সময় ছিনতাইকারীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে অন্যরা কিছু বোঝার আগেই সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। শুধু যানজট নয়, ফাঁকা ফ্লাইওভার আরো ভয়ঙ্কর। অপরাধী চক্র ফ্লাইওভারের দুপাশে নাইলনের সুতা ধরে রাখে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহীরা ওই পথ দিয়ে গেলে সুতা গলায় বেঁধে পড়ে যান। তখন কৌশলে সব টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায় চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে- মালিবাগ, হাতিরঝিল, মহাখালী, মগবাজার ফ্লাইওভারে মাসে অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১০ জুলাই সুতার ফাঁদে পড়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ খুইয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির জোবায়ের। মধ্য রাতে বন্ধুকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে হাতিরঝিল হয়ে ধানমন্ডি ফেরার পথে মধুবাগ ফ্লাইওভারে সুতার ফাঁদে পড়েন তিনি। তানভির বলেন, হাতিরঝিলের মধুবাগ ফ্লাইওভার থেকে নামার পথে কিছু একটা হাতে আটকে যায়। ব্যথা পেয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে দেখি, সুতা আটকে হাত কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম কয়েকজন এসে আমাকে ঘিয়ে ধরল। চাকু দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা পালিয়ে যায়। গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় কুড়িল ফ্লাইওভারে এমন ফাঁদে পড়েন শেখ রায়হান কবির। তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে সুতায় আটকে তার হাত কেটে যায়। তবে তিনি সেখানে না থামায় কোনো বিপদ ঘটেনি।

ভরদুপুরে সুতার ফাঁদে পড়েছিলেন সংবাদকর্মী মোহাম্মদ হোসাইন তারেক। গত ১১ জুলাই দুপুরে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন বলে জানান। তারেক বলেন, মিন্টু রোড থেকে মগবাজার ফ্লাইওভারে উঠে বামে টার্ন নিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। ফ্লাইওভারের উপর বামের লেনের রাস্তাটা বেশ নীরব ছিল। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। মূল ফ্লাইওভার থেকে বামে টার্ন নিতেই সুতায় গলা ও হাত জড়িয়ে যায়। আমার বাম হাতের একটু অংশ কেটে যায়। কিন্তু একটু এদিক-সেদিক হলেই আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী অংশে সুতার ফাঁদে পড়ে গলার চামড়া কেটে যায় মাহমুদ রেজা তফুর। গত ১১ আগস্ট দিনের বেলা খিলগাঁও ফ্লাইওভারে সুতা দেখে গাড়ি থামিয়ে তা সরিয়ে রাখেন আসাদুর রহমান নামের এক যুবক।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভার থেকে ৪টি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি রাত সোয়া ১টার দিকে মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর সোনারগাঁও প্রান্ত থেকে মিজানুর রহমান নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই তাকে হত্যা করা হয় বলে জানায় পুলিশ।

পরে গত ২৩ জানুয়ারি টঙ্গী থেকে নুরুল ইসলাম এবং ২৫ জানুয়ারি গাজীপুরা ও তুরাগ থেকে আবদুল্লাহ বাবু ও জালালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ চক্রের সদস্যরা এক রাতে সর্বোচ্চ ৬টি এবং প্রতি জনে ২০০০-২৫০০টি ছিনতাই করেছে বলে জানায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে। এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি চক্র রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। কী উদ্দেশে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App