প্রবল স্রোত, নাব্য সংকট, ঘন ঘন ফেরি বিকলের পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথ বন্ধের প্রভাবে বিভিন্ন গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে স্বাভাবিক ফেরি পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ৩ কিলোটিার দীর্ঘ ওই নৌপথ পাড়ি দিতে আসা গাড়িগুলো ফেরির নাগাল পেতে উভয় ঘাটে আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ঘাটে আটকা পড়ে ঢাকাগামী শত শত বিভিন্ন গাড়ি। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও  প্রাইভেট কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দিনের পর দিন সিরিয়ালে আটকা পড়ে থাকছে।

ফেরি স্বল্পতা : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী অধিকাংশ ফেরি বহু বছরের পুরনো। সার্বক্ষণিক সচল রাখতে গিয়ে ইঞ্জিন সমস্যাসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় ওই ফেরিগুলো ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। এ কারণে এই নৌপথে লেগে থাকা ফেরির সংকট সহসা কাটছে না। বর্তমানে এই নৌপথের বহরে ছোট-বড় মিলে মোট ১৯টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি রো রো (বড়) ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, এনায়েতপুরী ও আমানত শাহ এবং ২টি ইউটিলিটি ফেরি বনলতা ও চন্দ্রমল্লিকা বিকল হয়ে আছে। মেরামতের জন্য ওই ৫টি ফেরি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা ‘মধুমতিতে’ রয়েছে। এদিকে ঘাটের গুরুত্ব বিবেচনায় এই নৌপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি সচল না থাকায় সেখানে স্বাভাবিক ফেরি পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।

প্রবল স্রোত : নৌপথের দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মা নদীতে এখনো প্রবল স্রোত বইছে। সেখানে চলাচলকারী ফেরিগুলো স্রোতের মুখে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ফেরিগুলো নির্দিষ্ট চ্যানেল ছেড়ে এক-দেড় কিলোমিটার ভাটিপথ ঘুরে চলাচল করছে। এতে পারাপারে সময় অনেক বেশি লেগে যাওয়ায় সেখানে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় ফেরি পার হতে আসা বিভিন্ন গাড়ির চাপ বেড়ে উভয় ঘাটে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

নাব্য সংকট : নৌপথের পাটুরিয়া প্রান্তে যমুনা নদীর পানি কমে নৌ-চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টির পাশাপাশি নাব্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি রো রো (বড়) ফেরি চলাচলের জন্য অন্তত ৮ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় গভীরতা না থাকায় বড় ফেরিগুলোর স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে চলাচল করার ফলে ডুবোচরের বালুর ঘর্ষণে ফেরির তলদেশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রপেলার’ ও ‘বুশ’ ক্ষয়ে

গিয়ে ফেরির মারাত্মক ক্ষতি হয়ে অনেক ফেরি ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। তবে নাব্য সংকট মোকাবিলায় পাটুরিয়া চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ৫টি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।

গাড়ির চাপ বৃদ্ধি : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতিদিন কয়েক হাজার বিভিন্ন গাড়ি ফেরি পারাপার হয়ে থাকে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথ বন্ধ রয়েছে। এর প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি পারাপারে বিভিন্ন গাড়ির চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ফেরি পারের অপেক্ষায় বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়ে উভয় ঘাটে জানজট লেগেই থাকছে। গতকাল দৌলতদিয়া ঘাটে আটকা পড়ে ঢাকাগামী শত শত বিভিন্ন গাড়ি। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে সৃষ্ট যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী সদর থানার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় দৌলতদিয়াঘাটগামী পণ্যবোঝাই বহু ট্রাক আটকে রাখছে পুলিশ। ঘাট পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে ওই ট্রাকগুলো সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পাটুরিয়া ঘাটেও অনুরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে অপচনশীল পণ্যবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো সাময়িকভাবে আটকে রেখে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।  তবে পাটুরিয়া চ্যানেলে প্রয়োজনীয় খনন কাজ শেষ হওয়া, বিকল ৫টি ফেরি মেরামত শেষে বহরে ফিরে আসার পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথ সচল হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।