×

আন্তর্জাতিক

সব ফাঁস করলো মিয়ানমার পালানো দুই সেনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৭ এএম

সব ফাঁস করলো মিয়ানমার পালানো দুই সেনা

পলাতক দুই মিয়ানমার সেনা

নানা রকমের নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই সেনা এবার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার সব কিছু ফাঁস করে দিয়েছেন। পলাতক দুই সেনার নাম জাও নাইং তুন (৩০) ও মিও উইন তুন (৩৩)। যাদের প্রথম দেখা গিয়েছিল চলতি বছরের ২২ মে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ইউটিউব চ্যানেলে। তাদের দুজনসহ মোট চারজনকে সেখানে দেখা যায় মিয়ানমার আর্মির পোশাক পরে বসে থাকতে।

পলাতক চারজনেরই দাবি, তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে গেছেন। তবে তারা কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধায়নে দেশ থেকে পালিয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে পৌঁছালো সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ এই হেগ শহরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলছে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার কার্যক্রম।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গেল আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর দুই সেনা জাও নাইং তুন ও মিও উইন তুনকে হেগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা চালানোর বিষয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসিতে দায় স্বীকার করলো মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য।

মঙ্গলবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর ওই দুই সেনাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ শহরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চলছে।

আইসিসিতে দেয়া সাক্ষ্যে ওই দুই সেনা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেসময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সৈনিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘যত রোহিঙ্গাকে দেখবে, সবাইকে গুলি করবে’। এসময় দু’জনে একের পর এক গ্রাম ধ্বংস, হত্যা ও গণকবর দেয়ার বীভৎস বর্ণনা দিয়েছেন।

এর মধ্যে মিও উইন তুন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় সেল টাওয়ার ও একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়েছিল বলে জানান। আর জাও নাইং তুন প্রায় একই সময় পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় একই ধরনের হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন। তার ওপরও নির্দেশ ছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধ যাকেই দেখবে সবাইকে হত্যা করবে। জাও নাইং বলেন, আমরা প্রায় ২০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছিলাম। পরে শিশু ও বৃদ্ধদের মরদেহ একটি গণকবরে ফেলা হয়।

ভিডিও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দুই সদস্য অন্তত ১৫০ রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং কয়েক ডজন গ্রাম ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। এসময় তারা ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন যারা সরাসরি এ ধরনের নৃশংসতায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া, সেনাবাহিনীর ছয়জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ দুই সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। পার্থক্য শুধু, আগের বর্ণনাগুলো ছিল ভুক্তভোগীদের আর এবারের কথাগুলো বেরিয়েছে সরাসরি অপরাধীদের মুখ থেকেই।

মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ফরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জনগণের কাছে এটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এই দু’জন আইসিসিতে উপস্থিত মিয়ানমারের প্রথম অপরাধী এবং আদালতের হেফাজতে থাকা প্রথম অভ্যন্তরীণ সাক্ষী হতে পারেন। আন্তর্জাতিক আদালতের নিয়মে অনুসারে সাক্ষীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার (উইটনেস প্রটেকশন) ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App