×

মুক্তচিন্তা

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে লাগাম দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৩৬ পিএম

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে লাগাম দরকার

ফাইল ছবি

অ্যান্টিবায়োটিক বর্তমানে একটি আত্মঘাতী হাতিয়ার। স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের সুবাদে যখন প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক ‘পেনিসিলিন’ আবিষ্কার হয়, তখন সারাবিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে এক বিস্ময়কর বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছিল। আগে বহু মানুষ ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর, সর্দির মতো সাধারণ রোগে মারা যেত; যা বর্তমানে শুনতেও অবাক লাগে। মানুষের এ ধারণা পরিবর্তন হয়েছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক বিপ্লবের’ কারণে; অতঃপর অসংখ্য মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। কিন্তু বর্তমানে ‘অ্যান্টিবায়োটিক আত্মসুরক্ষার নয়, আত্মঘাতী হাতিয়ার’; বিবেচ্য উদ্ধৃতির মূল কারণ- এর অবাধ ব্যবহার। এটি শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়! পশু-পাখি ও কৃষিতেও ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। পাশাপাশি ভেজাল ওষুধ ও নৈরাজ্যমূলক দামের রেশ টানা সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট তো রয়েছেই। যার একমাত্র ক্ষতির শিকার মানবসমাজ। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের জীবাণু সম্পূর্ণরূপে মেরে ফেলা অ্যান্টিবায়োটিকের মূল লক্ষ্য। চিকিৎসকের পরামর্শে কোর্স শেষ না করার ফলে ইদানীং অনেকের দেহে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সি’ দেখা দিচ্ছে। ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সি’ হলো ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। এক পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়া সেই ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠন করে। ফলে রোগীর দেহে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগেও অনেক সময় রোগের গতি থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিককালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ব্যক্তির টেস্ট রিপোর্টে দেখা যায়, ব্যক্তিটির দেহে ১৭টি অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়া গবাদি পশু-পাখি পালনেও ছোটখাটো রোগে গ্রাম্য পশু চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে অল্প সময়ে গবাদি পশুর গ্রোথ বৃদ্ধি পেয়ে লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

পাশাপাশি মানুষ প্রোটিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সেসব পশু-পাখির মাংস খেতে বাধ্য হওয়ায় বিপদে পড়ছেন। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, দেশের চিকিৎসালয়ে তিন-চার মাস বয়সী বাচ্চাসহ নবজাতক শিশুর মধ্যেও ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সি’ দেখা দিচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক রোধে সরকারের উপস্থিতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি প্রচারণা, সেমিনার, বিজ্ঞাপন বিশেষভাবে ভ‚মিকা রাখতে পারে! এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে যথার্থ জ্ঞান ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে ধারণা জন্মাতে হবে। একজন সাধারণ এবং অশিক্ষিত মানুষও যেন চিনতে পারে কোন ওষুধটি অ্যান্টিবায়োটিক, এ কারণে নির্দিষ্ট রঙের মোড়ক নির্ধারণ করা যেতে পারে। সবার পক্ষে অ্যান্টিবায়োটিকের নাম মনে রাখা সম্ভব না, ফলে এই প্রক্রিয়ায় চেনা সহজ হবে। নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক সময় ধরে গ্রহণ করা আবশ্যিক। ডোজ পরিপূর্ণ করে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সজাগ হতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতি সহজলভ্যতা দূর করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ কিংবা প্রেসক্রিপশন ছাড়া এর বিক্রি বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ডাক্তারদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইবে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে লোভী ব্যবসায়ীদের জিবে লাগাম টানতে শাস্তির ব্যবস্থাসহ জনমত গঠন আবশ্যক। পরিণামে রাষ্ট্র পেতে পারে সুস্বাস্থ্য ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী এক জাতি।

শিক্ষার্থী হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App