×

জাতীয়

চিরনিদ্রায় তারিক আলী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২৯ এএম

চিরনিদ্রায় তারিক আলী

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী

চিরনিদ্রায় তারিক আলী

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী আর নেই। সোমবার সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গূণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি মফিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, পাঁচদিন আগে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জিয়া উদ্দিন তারিক আলীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

আরো শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক এড. আসাদুল্লাহ তারেক, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, যুগ্ম আহ্বায়ক আরমা দত্ত এমপি, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান, সাবেক সচিব মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বাবু, সাবেক ছাত্রনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল, তাপস হালদার, মো. হেলালউদ্দিন, সাইফ আহমেদ, অনয় মুখার্জী প্রমুখ। এ ছাড়া ছায়ানট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ।

প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখা তারিক আলি ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী। যৌবনের শুরু থেকেই ছিলেন সংগীতে নিবেদিত। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে তার সংগীত শিক্ষণ এবং ছায়ানটের সঙ্গে আজীবন সম্পৃক্ততা। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সালে গণসঙ্গীতের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি রাজপথে গান গেয়ে বেরিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেন।

মুক্তিসংগ্রামের শিল্পী দলের সদস্য হয়ে শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, মুক্ত এলাকায় যোদ্ধাদের গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণে এই দলের ছিল বিশেষ ভূমিকা। লিয়ার লেভিন ধারণকৃত সেই দলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ফুটেজ কয়েক দশক পরে উদ্ধার করেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ এবং তাদের সাথী ছিলেন। নিউজার্সিতে সেই সময় কর্মরত তারেক মাসুদ নির্মিত ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্র তরুণদের আলোড়িত করে এবং তারিক আলী ছিলেন এই প্রামাণ্যচিত্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব।

১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী আটজন ট্রাস্টির অন্যতম ছিলেন তারিক আলি। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হয়ে ওঠে তার সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। আগারগাঁওয়ে নতুন জাদুঘর নির্মাণ কাজের তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবকাঠামো ও কর্মধারার সবখানে জড়িয়ে আছে এই অনন্য মানুষটির হাতের ছোঁয়া। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতিমনা এই ব্যক্তিত্ব জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন তার আরেক কর্মক্ষেত্র। তিনি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

[caption id="attachment_241189" align="aligncenter" width="700"] জিয়াউদ্দিন তারিক আলী[/caption]

তার মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এক শোকবার্তায় বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কর্মকাণ্ড এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তার কর্মের প্রেরণা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি তাই রয়ে যাবেন জাতীয় স্মৃতিতে ও করবে। আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই মানুষটি মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন।

তবে করোনা রোগীর দেহদান করা যাবে কি-না এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, যেহেতু তিনি করোনায় আক্রান্ত এ কারণে তার দেহ দান করা যাবে না। বিকেলে তারিক আলীর মরদেহ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে ট্রাস্টি ও জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সীমিত পরিসরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আসরের নামাজের পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App