×

পুরনো খবর

সংসদে সমালোচনা বিএনপির, জবাব জাপার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:৩১ পিএম

জাতীয় সংসদে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপি দলীয় এমপি হারুণ অর রশীন ও রুমিন ফারহানা। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন।

তারা বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করে নাটক সাজানো হচ্ছে। আর সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসময় এমপি হারুন সব মানুষ আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ পাবেন কিনা তা জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন।

নিজের নির্বাচনি এলাকার তিনটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে বিএনপির হারুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ! এটা কি সম্ভব! পুলিশের কাছে যে অস্ত্র থাকে তা মোকাবিলার জন্য সন্ত্রাসীদের কাছে যে অস্ত্র দরকার তা থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু এখানে উদ্ধার দেখানো হয় হাতে তৈরি বাটাল, পিস্তল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে উপর্যুপরি হত্যা করছে। আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পুলিশের গুলিতে টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। আদালতে বিচার হচ্ছে। কিন্তু তিন হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ডের ওইসব পরিবার কি আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? প্রশ্ন করেন হারুন।

২০০৩ সালে প্রণীত ‘হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ’ আইনের প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, এই আইনটিতে চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনের আওতায় খুব বেশি মামলা হয়নি। যে গুটিকয়েক মামলা হয়েছে তার অগ্রগতি সম্পর্কে বেশি জানি না। এই দীর্ঘ সাত বছর গেলো, এই সময় অসংখ্য ব্যক্তি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। কিন্তু তার মামলাগুলো কী হলো? কেন পরিবার মামলা করার সাহস পায় না? কেন মামলা হয় না? হলেও সেগুলোর কী অবস্থা জানতে চান তিনি।

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, টেকনাফে কুখ্যাত ওসি প্রদীপ ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম পেয়েছেন। এই পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ছয়টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়, তার প্রত্যেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পুরস্কারস্বরূপ কোনো পুলিশ অফিসার যদি সর্বোচ্চ পদক পেয়ে থাকেন তাহলে সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে উৎসাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। আর কেবল পদক নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থ লেনদেনের বিষয় জড়িত রয়েছে। সাধারণ পরিবার থেকে ধরে নিয়ে অর্থ দাবি করা হয়। অর্থ না পেলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। অথচ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গুম বলে কিছু নেই। পুলিশের আইজি বলেন, ক্রসফায়ার বলে কিছু নেই। এগুলো এনজিওগুলোর দেওয়া শব্দ। এনজিওগুলো বিদেশ থেকে পয়সা আনে, সেই পয়সা হালাল করবার জন্য তাদের ক্রসফায়ারের মতো শব্দ তৈরি করতে হয়।

তিনি বলেন, যেই রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়, তা ইঙ্গিত করে সেখানে বিচার বিভাগের ধ্বংস হয়েছে। আইনের শাসনের ধ্বংস হয়েছে। মানুষ বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছে। রাষ্ট্রটি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

সংসদে পয়েনট অব ওর্ডারে বিএনপির দুই এমপির অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। বিএনপি সরকারের আমলে ক্লিনহার্টের নামে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে সেই নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে সবাই। এখানে ওসি প্রদীপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায় কেউই এড়াতে পারেন না। ওসি প্রদীপের প্রথম পদোন্নতিটি বিএনপির আমলে হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছিল। আমরা তখনও এর বিরুদ্ধে ছিলাম। এখনও এর বিরুদ্ধে। আমরা সমস্ত অমানিবকতার বিরুদ্ধে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App