×

মুক্তচিন্তা

করোনা আছে করোনা থাকবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৫৮ পিএম

করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধের ৬ মাস অতিবাহিত হলো। ৮ মার্চ বাংলাদেশে মানুষের দেহে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে এক পরিবর্তিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ কেন বিশ্বের কোনো দেশই এমন পরিস্থিতির কথা কিছুদিন আগেও ভাবতে পারেনি। এতদিন পরও আজ করোনা আক্রান্তের হার তেমন কমছে না। সরকারি হিসাবে এখনো দেশে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ জনের কাছাকাছি। তথ্য বলছে, মোট পরীক্ষিত সংখ্যার মধ্যে আক্রান্তের হার প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। বলাবাহুল্য, করোনা আক্রান্ত অনেক মানুষই পরীক্ষার আওতায় আসছে না। এই হার ৫ শতাংশে নেমে আসতে কত সময় লাগবে তা বলা কঠিন। অবস্থাদৃষ্টে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো আশা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতদিন গণপরিবহনে যাত্রী বহনের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করা হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা তুলে নেয়া হয়েছে। গণপরিবহনে যাত্রীর ঠাসাঠাসি, বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেছে। পরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নেই কোনো বালাই। এমনিতেও রাস্তাঘাটে, হাট-বাজারে, বিপণিকেন্দ্রে মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। বাইরে সবার জন্য ফেসমাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই তা মানছে না।

দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অফিস খুলেছে অনেক দিন হলো। সঙ্গে খুুলে দেয়া হয়েছে পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া, ঝুলে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে মানুষের চলাচল। পাবলিক প্লেসে বৃদ্ধি পাচ্ছে লোকসমাগম। দেশে যখন বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার, বেড়ে চলছে মৃত্যু, সেই মুহূর্তে গণপরিবহনকে এভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া সংক্রমণ এবং মৃত্যুকে আরো বহুলাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে এমনই ধারণা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট মানুষের। এমনতিই দেশে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস কম। করোনা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস বহনকারী মানুষের মধ্যে ৭৮ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ থাকে না। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি কোভিড ১৯-এর শিকার। অথচ এমন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই একে অন্যকে ছড়িয়ে দেন করোনার জীবাণু। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতিকে করোনার বিস্তার হ্রাসের কোনো সম্ভাবনা কম।

দেশে দিন আনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক। দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস গার্মেন্টসগুলো দীর্ঘকাল ধরে বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি আয়ে ধস নামার মুহূর্তে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়া হয়। গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে ঢাকায় ছুটে আসে শ্রমজীবী মানুষ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মুখে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে মানুষের চলাচল করোনা বিস্তারে আরেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। আরো কঠিন পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে গত ঈদুল আজহার ছুটিতে। গণপরিবহনের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জনগণকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ উৎসব পালন করতে বলা হলেও কুরবানির ঈদে এর কোনো বালাই ছিল না। গণপরিবহন ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যেতে এবং ঢাকায় ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। করোনা ভাইরাস বিস্তারে ঈদযাত্রার এই বেহাল অবস্থা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

করোনা আছে, করোনা থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করোনা ইতি ঘটার ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক কোনো খবর দিতে পারছে না। বাংলাদেশে এখনো ১০ শতাংশের মতো মানুষের ইমিউনিটি রয়েছে বলে ধরা হয়। এই হার ৭০ বা তার ঊর্ধ্বে পৌঁছে হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছতে কত সময় নেবে কে জানে! করোনার প্রতিষেধক নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে যে প্রতিযোগিতার রাজনীতি তাতে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগণের কাছে প্রতিষেধক টিকা কবে সহজলভ্য হবে তা বলা মুশকিল। এর মাঝে করোনা চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ বেরিয়েছে, যা বাংলাদেশেও উৎপন্ন হচ্ছে। তবে ব্যয়বহুল এই ওষুধের মূল্য হ্রাস পেয়ে যদি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসে তবে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীরা পেলে করোনায় মৃত্যুহার হ্রাস পাবে। করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই এখন বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেন। সঠিক ওষুধ সেবনের ব্যাপারে তারা যাতে সহজে উপযুক্ত পরামর্শ পান তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনা আছে, করোনা থাকবে। করোনার সঙ্গে হবে মানুষের বসবাস।

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App