×

সারাদেশ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুধুই পণ্ডশ্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০৫ পিএম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুধুই পণ্ডশ্রম

অনলাইন পাঠদান। ছবি: সংগৃহীত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুধুই পণ্ডশ্রম
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুধুই পণ্ডশ্রম

ছবি: প্রতিনিধি

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বাউফলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস নেয়া শুধুই পণ্ডশ্রমে পরিণত হচ্ছে। উদাসীনতা, প্রচার না হওয়া, আগ্রহ না থাকা, মনিটরিং না করা, নেট সমস্যাসহ নানাবিধি প্রতিবন্ধকতার কারণে এখন অনলাইন ক্লাস উলোবনে মুক্তো ছড়ানোর মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরাই অনলাইন ক্লাসকে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের সহায়ক বলে মনে করছেন না।

বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাউফলে ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি মাদ্রাসা এবং ১২টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টি মাধ্যমিক, ১২টি মাদ্রাসা এবং ৩টি কলেজে অনলাইন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। ক্লাসগুলো জুম অ্যাপের মাধ্যমে না হয়ে ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুক বা ইউটিউবে আপলোড করে দেয়া হয়। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে এই ক্লাসগুলো করা হচ্ছে তাদের মধ্যে শতকরা ৫ জন শিক্ষার্থীও সেগুলো দেখেন না।

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থীরই স্মার্ট ফোন নেই। অর্থ ব্যয় করে ডাটা কিনে দেখারও সুযোগ কম। আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস নেয়ার জন্য বিষয়ভিত্তিক একশত করে টাকাও নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ জানান, অনলাইন ক্লাসের চেয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দৈনিক এক একটি শ্রেণির ক্লাস চালু করলেও শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসত। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শতকরা ৮০ জন শিক্ষার্থীই গ্রামের বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। গ্রামের সব শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন কেনার মতো সুযোগ নেই।

গ্রামের বেশিরভাগ অভিভাবকই জেলে, কৃষক, রিক্সাওয়ালা, অটোচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্র চাকুরীজীবী। ঘর-সংসার সামলে তাদের স্কুল কলেজে পড়ুয়া সন্তানদের স্মার্ট ফোন কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই। ফলে অনলাইন ক্লাসের মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা ক্লাসের সঠিক সময় এবং ফেসবুক বা ইউটিউবের লিংক সম্পর্কে জানে না।

এছাড়া তাদের অনেকেরই স্মার্ট ফোন নেই। এক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন না থাকাও একটা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছ। শিক্ষার্থীরা জানায়, অনলাইন ক্লাস একমুখী। না বুঝলে স্যারের কাছে প্রশ্ন করা যায় না। ফলে অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ কম। এর থেকে স্কুলেই প্রতিদিন একেক শ্রেণির জন্য এক একটি ক্লাস চালু করলে তাদের সুবিধা হতো।

বাউফলের বীরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রাসেল জানান, গ্রামের সর্বত্র এখনো নেট পাওয়া যায় না। অনেক সময় বাসা-বাড়িতে বসে ক্লাসের বক্তব্য রেকর্ড করে নিতে হয়। নেটের জন্য প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরপরেও এর সুফল শিক্ষার্থী পর্যায়ে পৌঁছে না।

কালাইয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষ জানান, অনলাইন ক্লাসে সিংহভাগ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকে। পরে লিংক খুঁজেও তাদের ক্লাস শোনার সুযোগ হয় না। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। ফলে এটি একমুখী ক্লাস বলেও তিনি স্বীকার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কলেজ, মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানগণ জানান, সরকারের হুকুম মোতাবেক ক্লাস নিতে হচ্ছে। আমরাও করছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এর কোনো আউটপুট শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না।

বাউফল উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নূরুন্নবী জানান, ক্রমান্বয়ে সব স্কুল, মাদ্রাসা এবং কলেজগুলোতে অনলাইন ক্লাস চালু করার প্রচেষ্ট চলছে। তবে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ হিসেব করার মতো হচ্ছে না এ বিষয়ে আরো বাস্তব উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের জন্য অর্থ নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App