×

সারাদেশ

আনন্দ স্কুল প্রকল্পটি পুনরায় চালুর দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৩৩ পিএম

আনন্দ স্কুল প্রকল্পটি পুনরায় চালুর দাবি

ফাইল ছবি

রস্ক প্রকল্পের আওতায় ও বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করতে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তিন দফায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দ স্কুল চালু করা হয়। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় তিন ধাপে মোট ১২৪টি আনন্দ স্কুল চালু করা হয়। তবে ২০১৯ সালে প্রকল্প শেষ হলে স্কুলের শিক্ষকগণ বেকার হয়ে পড়ে। বতর্মানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আনন্দ স্কুলটি চালু করে পুনরায় নিয়োগের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষকরা।

অফিস সূত্রে জানা যায়, পর্যায়ক্রমে তিন দফায় ১২৪টি আনন্দ স্কুল চালু করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় পিএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে ভালো ফলাফল নিয়ে পাশ করে। তৃতীয় দফায় ১৫ টি আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ২০১৯ সালে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে প্রকল্পটি মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে পিইসি পরীক্ষায় ১০৫টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে রৌমারী উপজেলার প্রত্যান্তঞ্চলে ১ম দফায় মোট ৫১টি দ্বিতীয় দফায় ৫৮টি ও তৃতীয় দফায় ১৫টি আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্প চালু করা হয়। প্রতিটি স্কুলে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

১২৪টি আনন্দ স্কুল থেকে পর্যায়ক্রমে পিইসি পরীক্ষায় মোট ২ হাজার ৩ শত ২০ জন ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে শতভাগ পাশ করা স্কুলগুলো হচ্ছে চান্দারচর আনন্দ স্কুল, খাটিয়ামারী আনন্দ স্কুল, সুতিরপাড় আনন্দ স্কুল, মন্ডলপাড়া আনন্দ স্কুল, সবুজপাড়া আনন্দ স্কুল, যাদুরচর আনন্দ স্কুল, ধনারচর আনন্দ স্কুল, পাখিউড়া আনন্দ স্কুল, সোনাপুর আনন্দ স্কুল,পূর্ব পাখিউড়া আনন্দ স্কুল, দক্ষিণ টাপুরচর আনন্দ স্কুল, বাগুয়ারচর আনন্দ স্কুল, তিনতেলি আনন্দ স্কুল, বাঘমারা আনন্দ স্কুল, চরকাজাইকাট আনন্দ স্কুল, চর ইটালুকান্দা আনন্দ স্কুল, বালুরগ্রাম আনন্দ স্কুল, টাপুরচর আনন্দ স্কুল, চর ধনতলা আনন্দ স্কুল, উত্তর আমবাড়ি আনন্দ স্কুলসহ মোট ১০৫টি স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাটি চরাঞ্চল এলাকা। দূর্গম, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিকটতম কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়। অনেক শিশু এলাকার কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও দূরবর্তী ও অভাব অনটনের কারণে তারা ঝড়ে পড়ে। ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় দিনে দিনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য এই আনন্দ স্কুল চালু করেন। যাতে কোনো শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই, পোশাক, শিক্ষা উপকরণ, পরীক্ষার ভাতা ও উপবৃত্তি প্রদান করেছেন। আনন্দ স্কুলের ঘরের জন্য প্রতি মাসে ঘর ভাড়া দেয়া হত। নিয়োগকৃত শিক্ষকের জন্য প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। আনন্দ স্কুল পরিদর্শনের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি ও প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ জন্য তাদেরকে প্রতি মাসে সম্মানী ভাতা দেয়া হতো। তারা সবসময়ে আনন্দ স্কুলগুলো পরিদর্শন করেন ও পাঠদানের পরামর্শ দিতেন। আনন্দ স্কুলের ৫ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই শিক্ষকরা হতাশায় পড়েছেন।

খাটিয়ামারী আনন্দ স্কুলের শিক্ষক মোছা. ববিতা খাতুন, চরবামনের চর আনন্দ স্কুলের শিক্ষক মোছা. তৌহিদা খাতুন ও চান্দার চর আনন্দ স্কুলের শিক্ষক মোছা. রোকছানা খাতুনসহ তারা জানান, আমাদের স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এসবের অবদান তিনবারে সফল প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি এ আনন্দ স্কুল চালু না করলে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকত।

আনন্দ স্কুলের ৫ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। আনন্দ স্কুলটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে বর্তমান সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন (এমপি) বরাবরে একটি স্বারক লিপি প্রদান করা হয়। অনুলিপি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রীর কাছেও জোর দাবি করছি।

আনন্দ স্কুলের পুল শিক্ষক মো. আতাউর রহমান, মো. ইদ্রিস আলী. মো. খয়রাত হোসেন জানান, অন্যান্য স্কুলের চেয়ে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার মান অনেক ভালো। ৩৫টি স্কুলের শিক্ষার্থী শতভাগ পাশ করেছে। প্রকল্পটি আবারো চালু করলে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী শূন্যের কোঠায় আসবে এবং বেকারত্ব শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষা পাবে।

আনন্দ স্কুলের উপজেলা কো-অডিনেটর মো. আবু রায়হান বলেন, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠা আনন্দ স্কুলের কার্যক্রম ভালোই চলছিল। রৌমারী উপজেলায় আনন্দ স্কুলের পাশের হার ৯৬%।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, আনন্দ স্কুলের ফলাফল অনেক ভালো। প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা হলে ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে, পাশাপাশি আনন্দ স্কুলের নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App