সবুজ মাঠে হঠাৎ বেগুনি ধানে কৌতুহল
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৪১ পিএম
খেতের আইলে দাঁড়িয়ে বেগুনি রঙের দুলালী সুন্দরী ধান দেখেন এক আগন্তুক।
ছবি: প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দুলালী বেগমের নামানুসারে ধানের নামকরণ করা হয় ‘দুলালী সুন্দরী’। দেশে প্রথমবারের মতো এ জাতের ধান চাষ করেন তিনি। এই ধান দেখতে বেগুনি রঙের।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মাঠজুড়ে সবুজ ধান হালকা বাতাসে দুলছে। চিকচিক করছে সোনালি রোদে। চারদিকে সবুজে ভরা এমন ধানখেতের মধ্যে হঠাৎ আড়াই শতক জমিতে বেগুনি রঙের ধান কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়। যেন সবুজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে বেগুনি। কারো কারো মনে হতে পারে পোকার সংক্রমণে সারা খেতের ধান বেগুনি হয়ে গেছে। আসলে এটি এক ধরনের ধানের জাত। যার নাম দুলালী সুন্দরী ধান। এর ধান ও চালের রঙও বেগুনি। এমনকি ভাতও বেগুনি।
জানা যায়, দেশে প্রথমবারের মতো এ জাতের ধান চাষ করেছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দুলালী বেগম। সুন্দরগঞ্জের দুলালীর নামানুসারে এই ধানের নামকরণ করা হয় ‘দুলালী সুন্দরী’। এবার প্রথমবারের মতো খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় এ ধানের চাষাবাদ হয়। তাই এক নজর এই দুলালী সুন্দরীকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ পোজ দিয়ে তুলছেন ছবি। আবার কেউ ধানের গোছ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। দুলালী সুন্দরীকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতী-মিকশিমিল এলাকার কৃষক অমল দাশ। রূদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে শোলগাতী সরদারের মোড় যেতেই চোখে পড়ে এ ধানের খেত।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে মিকশিমিল এলাকার অমল দাশ এবং মিন্টু দাশ নামের দুজন কৃষক দুলালী সুন্দরী ধান চাষ করেন। এ ধানে গোছা প্রতি ১৮ থেকে ২৮টি শিষ ধরে। একটি শিষে ১৬০ থেকে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান হয়। আমনের থেকে বোরো মৌসুমে এটির ফলন ভালো পাওয়া যায়।
[caption id="attachment_240842" align="aligncenter" width="700"] ছবি: প্রতিনিধি[/caption]ডুমুরিয়ার রূদাঘরা ইউনিয়নের মিকশিমিল এলাকার কৃষক অমল দাশ জানান, দ্য সলভেশন আর্মি নামের এক উন্নয়ন সংস্থা থেকে ১ কেজি ‘দুলালী সুন্দরী’র বীজ পাই। তারা আমাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। আমার দুইটি জমিতে, একখানে আড়াই কাঠা এবং আরেকখানে ৪ কাঠা জমিতে এ ধানের চাষ করি। তবে ৪ কাঠা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি আড়াই কাঠার ধান রয়েছে।
প্রতিদিন খেতে অনেক মানুষ আসে। কেউ ছবি তোলে। আবার কেউ কেউ ধানের গোছ তুলে নিয়ে যায়। খেত রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কৃষি অফিস থেকে লোক এসে দেখভাল করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করি, ফলন ভালো হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দেবনাথ জানান, নতুন জাতের ধান হওয়ায় সেটি রক্ষা করা একটু কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ধানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করছে। আমরা নিয়মিত দেখভাল করছি। অনেক কৃষকের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। এ ধানের বীজ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, ‘দুলালী সুন্দরী’ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ডুমুরিয়াতে চাষ হচ্ছে। এই ধান দেখতে বেগুনি হওয়ায় কৌতূহল বাড়ছে। ‘দ্য সলভেশন আর্মি’র সহযোগিতায় তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মাঠে বিভিন্ন সময়ে তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি, ভালো ফলন পাওয়া যাবে।