×

সাহিত্য

প্রাণি জগতে উল্লাস দেখা গেছে বিস্ময়করভাবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১৮ এএম

প্রাণি জগতে উল্লাস দেখা  গেছে বিস্ময়করভাবে

কবি ও কথাশিল্পী আবিদ আনোয়ার

আবিদ আনোয়ার। প্রখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার ও কথাশিল্পী। বেতার-টিভির তালিকাভুক্ত বিশেষ শ্রেণির গীতিকারও তিনি। তার কবিতায় আছে স্বতন্ত্র এক স্বর। দারুণ ছন্দে বুননশীল তার লেখনী, কুশলী তার নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞান এই কবির কবিতার ভূমিতে একটি বড় ফসল। বহুমাত্রিক এই লেখক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের দর্শনই তার জীবনদর্শন। আর তার বুকের মধ্যে যে প্রেম, সেই প্রেমও তার কবিতাকে অনায়াসে দখল করেছে। জীবনযাপনের কোলাহলের ভেতরেও কবিতাই যেন তার সাধনা। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৯। কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)-তে পার্টটাইম কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত।

বিশিষ্ট এই কবির করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে আমার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। ফলে আমার অধিকাংশ সময় ঘরেই কাটছে। যখন করোনা আসল তখন এতে খুব একটা পরিবর্তন এসেছে তা নয়। বাইপাস সার্জারির ইফেক্ট কমে যাওয়ার পর শারীরিকভাবে একটু সুস্থ হয়ে মাঝে মাঝে বের হতাম। কারণ আমি এখনো কাজ করে খাই। আইসিডিডিআরবিতে ২০ বছর এডিটর হিসেবে কাজ করতাম। এখন কনসালটেন্ট এডিটর হিসেবে আছি। এছাড়া ডিজি হেলথ-এর যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সেটা ১১ বছর ধরেই আমি করছি পার্ট টাইমার হিসেবে। গত বছর অসুস্থতার কারণে করতে পারিনি। এই করোনাকালটা কেটেছে গত বছরের সেই বার্ষিক প্রতিবেদনটা সম্পাদনা এবং আইসিডিডিআরবির কাজগুলো করেই। এসব কাজ তো ইংরেজিতে লেখা। সেসব পড়তেই পড়তেই সময় গড়িয়ে গেছে। অন্যকোনো পড়াশোনা তেমন হয়নি আমার। এছাড়া মাঝে মাঝে ফেসবুকিং, ছড়া ও কবিতা লিখেছি। সেসব ছাপাও হয়েছে।

করোনায় চেনা পৃথিবী কতোটা বদলে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বদলে গেছে অনেকটাই। প্রথম বদল যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে মূল্যবোধ। মানুষের মূল্যবোধহীনতা আমাকে খুব আক্রান্ত করেছে। এ নিয়ে ফেসবুকেও পোস্ট দিয়েছি। ভারত এবং বাংলাদেশের এমন কিছু দৃশ্য দেখে আহত হয়েছি। মানবিকতার অবমূল্যায়ন ঘটেছে মারাত্মকভাবে। মানবিকতা মানুষ ভুলে গেছে। মায়ের অসুখের খবর পেয়ে সন্তানরা মা-বাবার কবরে যায় না। এর মধ্যে প্রথম ভয় কাজ করেছে। আইসিডিডিআরবির যে বিখ্যাত জার্নাল, যেটা এখন লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়, সেটা সম্পাদনা করতে গিয়ে আমি যতটুকু বুঝি ভাইরোলজি থেকে শুরু করে মেডিকেল সায়েন্সের অনেক কিছু বুঝি। যেটার আলোকে ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ মানুষ মারা গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাসও মরে যায়। ভাইরাস ট্রান্সফার হওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না। কিন্তু মানুষের মানবিকতা পরিবর্তন হয়নি।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে- যেটা সব দেশেই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে খুব কমই হয়েছে। সেটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এর কারণে বাতাসের কিছু গুণ থাকে, সেই গুণাগুণ অনেক বেড়ে গেছে। এর মানে- এই প্রাণি জগতে মানুষ যে সব চাইতে জঘণ্য প্রাণী তা বুঝা গেছে। কারণ অন্যকোনো প্রাণী প্রকৃতিকে ওভাবে ধ্বংস করেনি। কিন্তু এই করোনাকালে লকডাউনের ফলে খানিকটা উন্নত হয়েছে। কিন্তু ঢাকার রিপোর্ট একইরকমই আছে। আর বাকি সমস্ত বিশ্বে বদলেছে। যেমন আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ হিসেবে ভারতও ঘনবসতির দেশ। কিন্তু সেখানেও পুরীর সমুদ্র তীরে এই পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা গেছে। অর্থাৎ কাছিমকে ডাঙায় উঠে মহানন্দে ডিম পাড়তে দেখা গেছে। মানুষের ভয়ে যারা এতদিন ডাঙায় আসেইনি। তবে করোনার কারণে প্রাণি জগতে উল্লাস দেখা গেছে বিস্ময়করভাবে। এমনকি আমাদের কক্সবাজারের সৈকতে ডলফিন দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা মানুষরাই তো দায়ী। এই পরিবর্তনটাও তো বিশেষ পরিবর্তন। ওজোন স্তরেরও উন্নতি ঘটেছে। এর মানে হচ্ছে লকডাউনের কারণে প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর যে পরিবর্তন তা হচ্ছে বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক মন্দা বেড়েছে। এছাড়া পৃথিবী অনেকটাই বদলে গেছে।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। বছরখানিক সময় লাগবে। তবে সাবধানে থাকতে হবে। যদিও আমাদের দেশের মানুষ খুবই অসচেতন। এছাড়া শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও কিছু গোয়ার্তুমি ভাব আছে। অশিক্ষিত মানুষের মূর্খতা মানা যায়। কিন্তু শিক্ষিত মানুষদের মূর্খতা ভয়ঙ্কর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App