×

সাহিত্য

মঞ্চের দুয়ার খোলার অপেক্ষায় নাট্যকর্মীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

মঞ্চের দুয়ার খোলার অপেক্ষায় নাট্যকর্মীরা

মহিলা সমিতিতে প্রদর্শিত ‘লালজমিন’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি।

মঞ্চের দুয়ার খোলার অপেক্ষায় নাট্যকর্মীরা

মহিলা সমিতিতে প্রদর্শিত ‘লালজমিন’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি।

মঞ্চের দুয়ার খোলার অপেক্ষায় নাট্যকর্মীরা

শূন্য নাট্যমঞ্চ

শিল্প সংস্কৃতির চারদিক

করোনার কারণে প্রায় ৫ মাস ধরে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বন্ধ রয়েছে থিয়েটার কার্যক্রম ও প্রদর্শনী। তবে সরকারি নতুন নির্দেশনা না এলেও স্বাস্থ্যবিধির শর্ত মেনেই গত ২৮ আগস্ট মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘লালজমিন’ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে দরজা খোলে মঞ্চের। এরপর থেকে অন্য নাট্যদলগুলোও সাহসে বুক বেঁধে মঞ্চের আলোয় নিজেদের মেলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা অপেক্ষায় আছে দেশের প্রধান সাংস্কৃতিককেন্দ্র শিল্পকলা একাডেমির বন্ধ দুয়ার খোলার।

এ প্রসঙ্গে জানতে শূন্যন রেপার্টরির দল প্রধান মোমেনা চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, এখন অফিস-আদালত, হাট-বাজার সবই চলছে। তাহলে থিয়েটার হবে না কেন? আমি নিজেও টেলিভিশনের কয়েকটি নাটকের শুটিং করলাম। সে কারণেই এই উদ্যোগটি নিয়েছি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা নাটক মঞ্চায়ন করেছি। আমি মনে করি, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নয়। আমাদের আরো বহুদিন করোনা নিয়ে বাঁচতে হবে। তাই নিউ নরমাল জীবনে অভ্যস্ত হতে হবে।

প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদলের নির্দেশক অনন্ত হীরা হল খুলে দেয়ার ব্যাপারে ৩টি প্রস্তাব দিয়ে বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া, বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে হল ভাড়া মওকুফ করা এবং প্রথম তিন মাস শুধু শুক্র, শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে মিলনায়তন বরাদ্দ দেয়া।

অনন্ত হীরার সঙ্গে হল খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়ে নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদও বলেন, আমি হল খোলার অপেক্ষায় আছি। আমি তো যে কোনো সময়ই নাটক প্রদর্শনীর জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছি। আগেই মহড়া কক্ষ খুলে দিয়েছি। আমি চাই সব হল খুলে দিক, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নাটক প্রদর্শনী করতে আগ্রহী।

নাট্যজন লাকী ইনাম বলেন, নাটকের সেট দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে নাটক মঞ্চায়নের উপায়ও তো নেই। যেহেতু এই মাধ্যমটিতে পুরোপুরিই দর্শক আর শিল্পীর মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়। সেখানে দূরত্ব মেনে কতটাইবা সফল হওয়া যাবে? তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। কারণ আমাদের চলতি প্রযোজনা ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’র সদস্য সংখ্যাই প্রায় ৬০ জন। এত কলাকুশলী নিয়ে এ মুহূর্তে প্রদর্শনী করব কিনা তাও দ্বিধায় আছি।

স্বপ্নদলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সচিব জাহিদ রিপন বলেন, বাইরের পৃথিবী বন্ধ থাকলেও আমরা থেমে থাকিনি, এর মধ্যেই ভার্চুয়ালি ৪টা প্রোগ্রাম করেছি। পাশাপাশি মহড়া থেকে শুরু করে সব কাজই করেছি। তবে এখন সশরীরেই কাজ করতে চাই। আমরা হল খোলার অপেক্ষায় আছি।

নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম বলেন, আমরা আরো একটু অপেক্ষা করতে চাই। শিল্পকলা খুলে দিলেও আমরা অন্তত এই মাসটা অপেক্ষা করব। ঢাকা থিয়েটারের চন্দন রেজা বলেন, মঞ্চের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনেই মঞ্চে ছোট ছোট নাটক করব। পাশাপাশি নিয়মিত প্রযোজনাগুলো চলবে।

[caption id="attachment_240212" align="aligncenter" width="700"] মহিলা সমিতিতে প্রদর্শিত ‘লালজমিন’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি।[/caption]

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়েজীদ বলেন, আমরা অফিশিয়ালি শিল্পকলা একাডেমিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খোলার জন্য একটি চিঠি দিয়েছি। যেহেতু শিল্পকলা একাডেমি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। ভালো একটা সংবাদের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শিল্পকলা একাডেমি খুলে দেয়া হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই থিয়েটার করব।

তিনি বলেন, চিত্তবিনোদনের জন্য সরকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছে। তবে নাটক কেন নয়? এই ৫ মাস হল বন্ধ থাকায় নাটক দেখায় একটা অনভ্যস্ততাও তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে করোনার ভয়ে দর্শকও কম আসার আশঙ্কা আছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি কিছু নীতিমালাও করতে বলেছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি এবং নীতিমালা লঙ্ঘন করবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এই নেতা জানান, পুরো সেপ্টেম্বর মাস ফেডারেশনের উদ্যোগে নাট্যশালা ও মহিলা সমিতিতে নাটকের দলগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে হল ভাড়ায় নাটক প্রদর্শনীর সুযোগ করে দেয়া হবে। ফেডারেশনের বাইরে ও ভিতরে সব দলই এখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, মিলনায়তন খুলে দেয়ার ব্যাপারে আমরা মিটিং করেছি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আসবে। তবে দর্শক হোক কিংবা নাট্যকর্মীই হোক, সবাইকেই শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App