×

পুরনো খবর

কৃষক হাসলে হাসবে দেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৪ পিএম

কৃষক হাসলে হাসবে দেশ
আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে। করোনাকালেও কৃষিতে আমাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ক্রমাগত কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতি সত্ত্বেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে অনন্য উদাহরণ। দেশে উৎপাদিত প্রধান শস্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ধান, গম, পাট, সরিষা, মরিচ, আলু, মসুর, খেসারি, আখ ইত্যাদি। দেশে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদিত হয় এবং হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ২.৪৩ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ও আউশ ধানের উৎপাদন। মার্চ-এপ্রিলে অতিবৃষ্টির পর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আর জুনের শেষে শুরু হওয়া বন্যায় মোট তিন দফায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল, যার ৭০ শতাংশই ধান। কৃষি খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সাম্প্রতিককালের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও জামালপুর। গত জুনে যখন বন্যা শুরু হয় তখন উত্তরাঞ্চলের মাঠজুড়ে ছিল আমন ধানের বীজতলা, আউশ ধান, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও পাট। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশিরভাগ জমির ফসল ও বীজতলা। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন, যার প্রভাব পড়তে পারে এ বছর আমন ধান উৎপাদনে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমন ধানের উৎপাদন কম হলে দেশে চালের দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হতে পারে, ঠিক যেমনটি হয়েছিল ২০১৭ সালে হাওরে ফসল বিপর্যয়ের পর। এমনিতে করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে আছে দেশ, তার ওপর কৃষি অর্থনীতিতে ধাক্কা সামলানো সহজ হবে না। যেহেতু বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ, তাই যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ১. বন্যা সহনশীল ও আগাম (ধান ও অন্যান্য ফসলের) জাত উদ্ভাবন এবং কৃষকদের মাঝে বিতরণ, ২. পরিকল্পিত ও টেকসই বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, ৩. সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে কৃষকদের সতর্কীকরণ এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, ৪. নিয়মিত ড্রেজিং বা নদী শাসন ও খাল খনন এবং পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নদ-নদীর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং ৫. দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান এবং প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ৬. কৃষিপণ্য পরিবহন ও মূল্য নির্ধারণে সহায়তা প্রদান। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮-এর তথ্যমতে, দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪০.৬ শতাংশের জোগান দেয় কৃষি খাত এবং দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৪.১০ শতাংশ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করা কৃষি খাতের অভাবনীয় সফলতা আগামী দিনগুলোয় আরো বেগবান হবে। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধি এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা এই প্রত্যাশাই রাখছি। শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App