×

পুরনো খবর

কাটবে এ বিপর্যয় আসবে নতুন দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৭ পিএম

কাটবে এ বিপর্যয় আসবে নতুন দিন
করোনা মহামারির কারণে সংবাদপত্র বিক্রির সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রাজধানীসহ সারাদেশের অনেক সংবাদপত্র প্রকাশ। অধিকাংশ পত্রিকার মালিক দিতে পারছেন না তাদের কর্মীদের বেতনভাতা। চাকরি হারাচ্ছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংবাদকর্মী। চাকরি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে কর্মীরা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় সংবাদপত্রের মধ্যে ২৭৫টি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনিয়মিত অর্থাৎ বিজ্ঞাপন পেলে অথবা অর্থসংস্থান হলে ১৮টি সংবাদপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত প্রকাশের চেষ্টা করছে ১৬৩টি সংবাদপত্র। বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক (বিআইজেএন) দেশের ৩৪টি জেলার ৪৫৬টি স্থানীয় সংবাদপত্রের ওপর সম্প্রতি জরিপ করে এ তথ্য পেয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই সংবাদপত্র বিক্রি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। পত্রিকা হকার সমিতির সদস্যরা করোনার আগে দিনে ৩০ লাখ টাকার পত্রিকা বিক্রি করতেন, কিন্তু এরই মধ্যে বিক্রি ১৫ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। ঢাকায় পত্রিকা হকার রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। করোনা ভাইরাসের কারণে এদের অনেকের হাতে এখন কোনো কাজ নেই। সংবাদপত্র হকারদের সংগঠন সংবাদপত্র হকার্স কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে নানা সংকটে, দুর্যোগ, এমনকি যুদ্ধ পরিস্থিতিও সংবাদপত্রের প্রকাশনা অব্যাহত ছিল। বর্তমান মহামারির সংকটে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধের পথে। কিছু কিছু পত্রিকা স্বল্প পরিসরে চালু হলেও অধিকাংশ পত্রিকাই বন্ধ। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় পত্রিকা বিলুপ্তির পথে। শত বছরের মুদ্রণ গণমাধ্যমের ইতিহাসে এই সংকট সম্ভবত নজিরবিহীন। অতীতে বহু দেশে নানা পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে। তবে তা ছিল কর্তৃপক্ষ অথবা সাংবাদিকদের প্রতিবাদ হিসেবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারির প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সংবাদপত্র সংকটের ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম। এই অবস্থায় কীভাবে সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্প অব্যাহত থাকবে তা ভাবার বিষয়। দেশের প্রথম সারির কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। কমে গেছে প্রকাশিত পত্রিকার পৃষ্ঠা। পত্রিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক বিভাগ। যার ফলে চাহিদা অনুযায়ী সব লেখা ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না। পত্রিকা যাচ্ছে না শহরের বাইরে। এতে করে লেখকদের পাশাপাশি কাজ করার আগ্রহ কমছে সাংবাদিকদেরও। যার মাধ্যমে পত্রিকার হারাচ্ছে পাঠক। অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। এখনো অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। সংবাদপত্র শিল্পের সংকটের কারণে করোনা আক্রান্ত সংবাদকর্মীরা নিজেদের চিকিৎসা ব্যয়ও নির্বাহ করতে পারছেন না। সংবাদপত্র শিল্পের কর্মীরা এখন এক ঘোর দুর্দিন অতিক্রম করছে। পত্রিকা বন্ধ ও অনিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার করণে স্থানীয় পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনাগুলো লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। স্থানীয় পর্যায়ের যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন ভঙ্গ ও ভোগান্তির খবর জাতীয় পত্রিকায় জায়গা পেত না, সেগুলো কোনো না কোনো স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হতো। এটা অনিয়ম কমাতে নিঃসন্দেহে ভ‚মিকা রাখত। স্থানীয়রা যে কোনো সমস্যা নিয়ে ওইসব পত্রিকা ও সাংবাদিকের কাছে যেতে পারতেন। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং তার ‘সাঙ্গোপাঙ্গরা’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কারণে কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে থাকতেন। পত্রিকা বন্ধ হওয়ায় সে সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে। এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছেন সংবাদপত্র শিল্প। পত্রিকার পৃষ্ঠা কমে যাওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন লেখকরা। চাহিদা অনুযায়ী হাতের কাছে এখনো সব পত্রিকা পাচ্ছেন না পাঠক। সংবাদপত্র শিল্প এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। প্রত্যাশা করছি নতুন এক সোনালি দিনের। থেমে যাবে করোনা মহামারির প্রকোপ। আবার আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাটিয়ে উঠব সংবাদপত্রের এ বিপর্যয়। ভাকোয়াদী, কাপাসিয়া, গাজীপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App