×

জাতীয়

চীন কখনো বাংলাদেশের বন্ধু নয়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০৯ পিএম

সম্প্রতি ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সংবাদ বিশ্লেষণ ‘বাংলাদেশকে চীনের স্বীকৃতি ও দুদেশের নয়া সম্পর্ক’ শীর্ষক লেখাটি পড়লাম। নিবন্ধে লেখক অতি সুনিপুণভাবে বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন সময় চীনের কৌশলী অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির পাঠক হিসেবে নিবন্ধের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। শেষ কথা দিয়েই শুরু করি- লেখাটি শেষ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা এবং চীনা প্রবাদ দিয়ে। ‘‘২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরের সময় রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে একটি চীনা প্রবাদ বলেছিলেন। প্রবাদটি হচ্ছে, ‘সম্পর্কে যদি আন্তরিকতা না থাকে সেই সম্পর্ক টিকে থাকে না’। চীনের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি প্রযোজ্য কিনা- তা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন।’’

হ্যাঁ, পাঠক হিসেবে লেখার শেষ প্যারাটিকে সবচেয়ে চুম্বকীয় ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার কাছে। কিছুদিন আগেও শোনা যেত, আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রু লাগে না। অর্থাৎ, আমেরিকাকে সমস্যা সমাধানের জন্য ডেকে আনা মানে আরো বড় কোনো সমস্যা তৈরি করা। অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মতো।

বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার ১৬ দিন পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় চীন। অর্থাৎ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম হত্যাকারি খন্দকার মোশতাকের সময়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে প্রায় তিন বছর পর, ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। শুধুমাত্র চীন ভেটো দেয়ার কারণে এই প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হয়।

এটা আজ স্বীকৃত যে, অস্ত্র ও অর্থে শক্তিশালী চীনের ইন্ধনে মিয়ানমারের ১২ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে এখন বাংলাদেশে বাস করছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ যখন ক্ষমতাশালী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভোটের ব্যবস্থা করলো তখন চীন তার সরাসরি বিরোধীতা করলো।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন (১৫ আগস্ট) যেটি কয়েক বছর ধরে নানা অজুহাতে দলের কর্মীরাই ঠিকমতো পালন করছেন না, অথচ অনেকটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার মতো চীনা দূতাবাস এবার কথিত ওই জন্মদিনে খালেদা জিয়াকে উপহার পাঠিয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন করায় শুধু আওয়ামী লীগই নয় সচেতন মানুষও বিএনপির সমালোচনা করেছে, করছে। সেই বিবেচনায় চীনের উপহার পাঠানোর বিষয়টিকে আমরা কীভাবে দেখবো?

ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাকিস্তানকে অন্যতম সহযোগী বলে আখ্যায়িত করেছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাদের খুব ভালো ভাই ও সহযোগী। চীন ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোর-সিপিসি আরো দৃঢ় হবে। যার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। ভারতের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর দিয়ে অর্থনৈতিক করিডোর বানাচ্ছে চীন।

চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট। ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। ভূ-রাজনীতিতে সমর্থন পেতে চীন এখন বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুবিধা দেয়ার কথা বলছে। যা এর আগে তারা কখনো বিবেচনা করেনি। করোনা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন বিশ্ব রাজনীতির নতুন খেলায় মেতেছে চীন।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা বিস্মৃত হইনি। বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় ও খাবার দিয়েছিল এই প্রতিবেশি দেশটি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরাও প্রাণ দিয়েছেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। আবার অল্প সময়েই নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, চীন বাংলাদেশের সুসময়ের, ভারত দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্ক।

তাইতো সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে স্মরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সব সময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং যে কোনো প্রয়োজনে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যে কোনো সংকটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।”

এবার চীনের উহান থেকে আসা মরণঘাতি করোনা প্রসঙ্গে দুটি কথা। করোনায় চীনের মৃত্যু সংখ্যা গত চার মাস যাবত ৪,৬৩৪ জনই দেখানো হচ্ছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে মৃত্যু এতো কম! রহস্যটা কি? বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার উৎপত্তিস্থল হিসেবে চীন যেখানে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের প্রচুর মানুষ মারা যাওয়ার কথা, সেখানে তারা শুধুমাত্র লকডাউনে গিয়েই চার মাসের মাথায় করোনাশূন্য হয়ে ওঠে কীভাবে? অথচ অনেক দেশকে লকডাউনে গিয়েও মৃত্যু কমাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তাছাড়া, উহান ব্যতিত চীনের অন্য কোনো শহরে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়াসহ প্রায় পুরো পৃথিবী এ ভাইরাসের কারণে অচল হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের দাবির প্রেক্ষিতে চীন উহানে মৃতের সংখ্যা সংশোধন করে অনেক পরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, চীনের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে সব সময়ই একটা চাতুরিপনা থাকে। প্রয়োজনে সে খুব কাছের বন্ধু। দুঃসময়ে ধ্বংসাত্মক রুদ্রমূর্তি। বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১, ৭৪, ৭৫ আর বর্তমানের রোহিঙ্গা সংকট তার দৃষ্টান্ত।

এক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় শ্যামল দত্তের লেখার সেই উদ্ধৃতি উল্লেখ করার মতো- ‘‘বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক সম্প্রতি তার এক লেখায় নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘চীন এক ঘুমন্ত দৈত্য, একে ঘুমাতে দাও। এ জাগ্রত হলে সারাবিশ্বকে তছনছ করে দেবে।’’ জাগ্রত চীন কি তার সর্বগ্রাসী রূপই দেখাচ্ছে বিশ্বকে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App